الأحد، 26 ديسمبر 2010

অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধ ও প্রতিকার

হাড়ক্ষয় রোগে কুঁজো হব না-এই শ্লোগান নিয়ে ২০ই অক্টোবার বুধবার পালিত হল বিশ্ব অস্টিওপোরেসিস দিবস। অস্টিওপোরেসিস রোগ সম্পর্কে শিক্ষা, জনসচেতনতা এবং নীতি-নির্ধারকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল অস্টিওপোরেসিস ফাউন্ডেশন এ দিবসটি পালন উপলক্ষে বরাবরের মত এবারও নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মানব শরীরে মোট ২০৬টি হাড় আছে। স্বাভাবিক গঠনে হাড়ে আমিষ, কোলাজেন ও ক্যালসিয়াম থাকে বলে হাড় শক্তিশালী হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে ৩০ বছরের পর থেকে মানব শরীরে হাড়ের ঘনত্ব ও পরিমাণ কমতে থাকে, হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হতে থাকে। ফলে হাড় অতি সহজেই ভেঙে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে অস্টিওপোরেসিস বলে। অস্টিওপোরেসিস রোগীর যে কোনো হাড় সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়।



অস্টিওপোরেসিস হবার প্রবণতা কাদের বেশি?
— শতকরা ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে হাড়ের পরিমাণ বা ঘনত্ব বংশানুক্রমিকভাবে নির্ধারিত হয়।
— শতকরা ২০ ভাগ ক্ষেত্রে হাড়ের পরিমাণ বা ঘনত্ব নির্ধারিত হয় জীবন ব্যবস্থার মাধ্যমে।
— পুরুষের তুলনায় মহিলারাদের অস্টিওপোরেসিস বেশি হয় বিশেষ করে যারা শারীরিক গঠনে পাতলা,খাটো এবং বয়স্ক।
__ ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি
—ঋতুস্রাব বন্ধ হয়েছে বা মেনোপজ মহিলাদের।
— ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী।
— ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
— শারীরিক পরিশ্রম কম করা।
— এন্ডোক্রাইন (গ্রন্থি) সমস্যা : পিটুইটারি, থাইরয়েড, এডরেনাল ও গোনাড।
— স্টেরয়েড ও এন্টিকনভ্যালসেন্ট ড্রাগ সেবনকারী।
— হেপারিন থেরাপি।
— রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগী।
— যক্ষ্মা রোগী।
— খাদ্যনালীর অপারেশন।
— খাদ্যনালীর রোগ—সিলিয়াক ডিজিজ।
— লিভারের (যকৃত) সমস্যা।


অস্টিওপোরেসিসের লক্ষণঃ
১. পিঠে, কোমরে, ঘাড়ে ও পেশিতে ব্যথা।
২. মেরুদণ্ডের কশেরুকার উচ্চতা কমে যায়, রোগী সামনে ঝুঁকে থাকে এবং পেছনে কুঁজো হয় (কাইফোটিক ডিফরমিটি)। একে স্টুপেড আকৃতি বলে।
৩. কশেরুকা ভাঙার ব্যথা মেরুদণ্ড থেকে শুরু হয়ে পিঠের দু’পাশ দিয়ে সামনের দিকে আসে এবং বুক ও পেটে অনুভূত হয়।
৪. সাধারণত পড়ে গিয়ে হালকা আঘাতেই হাড় ভেঙে যায়।


হাড় মজবুত রাখার উপায়
উপযুক্ত ব্যায়াম—নিয়মিত হাঁটা, জগিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা এবং ওজন বহন করা। কিশোর বয়সে কায়িক পরিশ্রম করলে হাড়ের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং হাড় মোটা হয়। ফলে বৃদ্ধ বয়সে হাড় ক্ষয় কম হয়।
ক্যালসিয়াম গ্রহণ: ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্তিশালী করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধ করার জন্য সুষম খাদ্য এবং কিশোর বয়সে ১৩০০ মিলিগ্রাম, ৫০ বছর পর্যন্ত ১০০০ মিলিগ্রাম এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দৈনিক সেবন করা উচিত। কিন্তু মেনোপোজ হওয়া মহিলাদের অস্টিওপোরেসিসের ঝুঁকি বেশি বলে তাদের প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম করে ক্যালসিয়াম খাওয়া দরকার। আর ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের ভূমিকা অনেক বেশি। এ জন্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পনির, ছোট গুঁড়া মাছ, শিম খেতে হবে বেশি করে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। তবে বেশি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া ঠিক হবে না। এতে করে কিডনিতে পাথর হতে পারে। ট্যাবলেট খাওয়ার পর বেশি করে পানি পান করতে হবে।


দরকার ভিটামিন ডি : অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম পরিশোষণের জন্য ভিটামিন ডি দরকার। ২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকলে আমাদের প্রতিদিনের ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ হয়। ৫১-৭০ বছরের কারও জন্য প্রতিদিন ৪০০-৮০০ আইইউ ভিটামিন ডি দরকার হয়। ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণে ডিম, কলিজা, ছোট মাছ ও শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে।


ওষুধ থেকে সাবধান : অনেকেই সামান্য অসুখেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করে থাকেন। এসব ওষুধ সেবনে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্টেরয়েড, খিঁচুনি প্রতিরোধে এন্টিকনভালসেন্ট, রক্তের অসুখে এন্টিকোয়াগুলেন্ট ও থাইরয়েড রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবহারে না করলে হাড় ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে অস্টিওপোরেসিস।


ত্যাগ করুন ধূমপান ও মদপান : ধূমপান, মদপান ও কফি জাতীয় পানীয় হাড়ের ক্ষয় করে হাড়কে ভঙ্গুর করে। দেখা দেয় অস্টিওপোরেসিস। তাই এগুলো বাদ দিন চিরতরে।


ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা
১.সিরাম ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-ডি এবং টেস্টটোস্টেরন, এন্ড্রোজন, ইসট্রোজেন ও থাইরয়েড হরমোন। ২.কিডনি ফাংশন (ব্লাড ইউরিয়া, সিরাম ক্রিয়েটিনিন)।
৩. এক্স-রে। ৪. স্পেশাল টেস্ট : বোন মিনারেল ডেনসিটি, ডুয়াল এনার্জি এক্স-রে ও সিঙ্গেল এনার্জি এক্স-রে এবজোরসিওমেট্রি।


অস্টিওপোরেসিসের চিকিৎসা ও প্রতিকার
চিকিত্সা নির্ভর করে হাড়ের পরিমাণ হ্রাস, হাড়ের দুর্বলতা, ভঙ্গুরতা ও হাড়ের ভাঙার ওপর। এজন্য যা করা দরকার তা হলো :— নিয়মিত ব্যায়াম করা।
— দৈনিক পরিমিত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সেবন করা।
— বিসফোসফোনেট : এলেনড্রোনেট, ইটিড্রোনেট ও রাইসড্রোনেট সেবন।
— হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি।
— রেলোক্সিফেন ও ক্যালসিটোনিন ইনজেকশন।
— হাড় ভাঙার জন্য কনজারভেটিভ বা সার্জিক্যাল চিকিত্সার প্রয়োজন হয়।
— ব্যথা নিরাময়ের জন্য এনালজেসিক ওষুধ সেবন করতে হবে।

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق