الأحد، 26 ديسمبر 2010

শিশুর নিউমোনিয়া

নিউমোনিয়া শিশুদের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। ঋতু পরিবর্তনের সময় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে শিশুরা খুব সহজেই ঠাণ্ঠা-শর্দি বা কাশিতে আক্রান্ত হয় যা পরবর্তীতে নিউমোনিয়ায় রূপ ধারণ করে। প্রতি বছর আশংকাজনক ভাবে বিপুল সংখ্যক শিশু নিউমোনিয়াজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং নিউমোনিয়া বাংলাদেশের শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ।



বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিউমোনিয়াজনিত শিশুমৃত্যু হারকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে যার সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে Global Action Plan for the Prevention and Control of Pneumonia (GAPP)। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব, শিশু স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা ও পুষ্টির অভাবকেই দায়ী করা হয় শিশু নিউমোনিয়া মৃত্যু হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শিশুদের নিউমোনিয়া বিষয়ে মূল্যবান কিছু তথ্য দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ বারডেমের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. তাহমীনা বেগম (এফ.সি.পি.এস; এম.ডি; এম.এড)
ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : নিউমোনিয়া কি?


অধ্যাপক ডা. তাহমীনা বেগম : নিউমোনিয়া হচ্ছে ফুসফুসের এক ধরনের প্রদাহ যা যে কোনো বয়সী মানুষের হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : শিশুর নিউমোনিয়ার সাধারণ লক্ষণসমূহ কি কি?


ডা. তাহমীনা বেগম : শিশুর নিউমোনিয়ার সাধারণ লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট। তার সঙ্গে আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যাবে, শিশুটি দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে এবং তার বুকের পাঁজরের নিচের অংশ ভেতর দিকে দেবে যাচ্ছে।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিসের মধ্যে লক্ষণগত পার্থক্য কি?


ডা. তাহমীনা বেগম : অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। শিশুর তীব্র জ্বর থাকে এবং চিকিৎসা না দিলে শিশুর অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। শিশু নিস্তেজ হয়ে যায়। ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত শিশুর শ্বাসকষ্ট বেশি থাকে। বুকে শব্দ শোনা যায় (Wheeze), জ্বর কম থাকে এবং শিশু হাসি খুশি থাকে।

ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া কতটুকু ঝুকিপূর্ণ?


ডা. তাহমীনা বেগম : আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৫ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তার প্রথম কারণ নিউমোনিয়া। হাসপাতালে যেসব শিশু ভর্তি হয় তাদের এক তৃতীয়াংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসা প্রদান না করলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু দ্রুত মৃত্যুবরণ করে। বিশেষ করে যাদের বয়স ২ মাসের কম তারা রোগ শুরু হবার ২-৩ দিনের মধ্যেই মারা যায়।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : কখন একটি শিশুকে নিউমোনিয়াজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়?


ডা. তাহমীনা বেগম : মারাত্মক নিউমোনিয়া হলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। লক্ষণসমূহ হচ্ছে : ১। শিশু দ্রুত শ্বাস নিলে, ২। পাজরের নিচের অংশ ভেতরের দিকে দেবে গেলে, ৩। শ্বাসকষ্ট হলে, ৪। খেতে না পারলে, ৫। খিঁচুনি হলে, ৬। বমি করলে, ৭।শিশু নিস্তেজ হয়ে গেলে।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : শিশুকে নিউমোনিয়া টিকা দেয়ার পরও কি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে? কেন?


ডা. তাহমীনা বেগম : সাধারণত : তিন ধরনের জীবাণু দ্বারা শিশুর নিউমোনিয়া হয়। যেগুলো হলো : ক) Streptococcus pneumoniae, খ) Haemophilus influenzae, (গ) Meningococcus


এই তিন জীবাণুর জন্যেই টিকা আছে। টিকা দিলে নিউমোনিয়া হয় না। কিন্তু এই ৩টি জীবাণু ছাড়া অন্য জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির জন্যে নিউমোনিয়া হতে পারে। বিশেষ করে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : নিউমোনিয়া প্রতিকারে সাধারণত কি ধরনের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়?


ডা. তাহমীনা বেগম : নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস উভয় জীবাণু দ্বারা হতে পারে। ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া খুব বেশি বিপদজনক নয় এবং এটি আপনাআপনি ভাল হয়ে যায়। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া প্রতিকারে প্রথমত অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। মারাত্মক হলে ইনজেকশন এবং কম মারাত্মক হলে মুখে দেয়া হয়। তাছাড়া জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দেয়া হয়। অল্প কাশির জন্য ঘরে তৈরি লেবু বা আদা বা তুলসীপাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে বলা হয়। তবে কাশি বেশি হলে সালবিউটামল সিরাপ বা নেবুলাইজেসরের মাধ্যমে সালবিউটামল দেয়া হয়। তার সঙ্গে আমরা বলি বার বার শিশুকে বুকের দুধ দিতে।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : একটি শিশুর ঘন ঘন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে কি ধরনের বিপদ আশঙ্কা করা যায়?


ডা. তাহমীনা বেগম : ঘন ঘন নিউমোনিয়া হলে শিশুর অপুষ্টি দেখা দেয়। তাছাড়া কারণ হিসেবে আমরা মনে করি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে বা শিশুর হৃদপিন্ডের সমস্যা থাকার কারণেও ঘন ঘন নিউমোনিয়া হতে পারে।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা কি পরস্পরকে প্রভাবিত করে?


ডা. তাহমীনা বেগম : না । কারণ নিউমোনিয়া একটি জীবাণুঘটিত রোগ আর এ্যাজমা বংশগত।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : নিউমোনিয়া সনাক্তকরণে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয় কি??


ডা. তাহমীনা বেগম : সাধারণত না। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে নিউমোনিয়া হলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্তকরণ করা যায় । রক্ত পরীক্ষার বদলে এক্সরে রোগ নিরূপণে বেশি সাহায্য করে।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : নিউমোনিয়া কি সংক্রামক?


ডা. তাহমীনা বেগম : নিউমোনিয়া সংক্রামক। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যে সমস্ত নবজাতক স্বল্প ওজনের তাদের মধ্যে সংক্রমনের হার বেশি।


ই-হেলথ২৪ ডটকম ডটবিডি : কি ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতা শিশুর নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে?


ডা. তাহমীনা বেগম : ১। জন্মের পরপরই শিশুকে শালদুধ দিতে হবে এবং ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ দিতে হবে, ২। সময়মত শিশুকে সব টিকা দিতে হবে, বিশেষ করে বিসিজি, ডিপিটি ও হাম, ৩। ৬ মাস বয়স থেকে পরিবারের সব খাবার শিশুকে দিতে হবে যা শিশুকে অপুষ্টি থেকে রক্ষা করবে। কারণ অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর বারবার নিউমোনিয়া হয়, ৪। শিশুর সামনে ধূমপান করা যাবে না, ৫। নিয়মিত শিশুকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে, ৬। এক ঘরে অনেক লোক বসবাস করা যাবে না, ৭। জনসমাগম বেশি হয় (যেমন : বাজার) এমন স্থানে ছোট শিশুকে নেয়া যাবে না, ৮। নিউমোনিয়া হয়েছে এমন কারো কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق