উচ্চ রক্তচাপের পরেই আমাদের দেশে হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ হল বাতজ্বর । প্রতিবছর অনেক শিশু-কিশোর ও যুবক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রতি হাজারে ৭.৫ জন এবং প্রতি হাজারে ৪ জন শিশু বাতজ্বর ও বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে ভুগছে।
বাতজ্বর আসলে কতগুলো উপসর্গ ও লক্ষণের সমষ্টি, যা বিটাহিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস নামক এক প্রকার জীবাণু দ্বারা গলায় সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। গলা ব্যথা হওয়ার ১ থেকে ৫ সপ্তাহ পর এই রোগ দেখা দেয়। দূষিত খাদ্য ও অস্বাস্খ্যকর পরিবেশের মাধ্যমে বিস্তারিত এই জীবাণুর সংক্রমণ হয় ফলস্বরূপ টনসিল ও গলবিল লাল হয়ে ফুলে যায় ।
রিউমেটিক ফিভার বা বাত জ্বরের লক্ষণ:
১. ১০০ ডিগ্রী বা তারও বেশি জ্বর
২. তীব্র ব্যথাযুক্ত অস্থিসংযোগ এবং অস্থিসংযোগের স্ফীতি
৩. শুরুর দিকে গলার গ্রন্থি ফুলে ওঠা এবং ব্যথা করা
৪. হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ, বুক ধড়ফর করা, নাড়ীর গতি বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি ।
৫. গিরায় ব্যথা, যা হলে মূলত বড় গিরায় যেমন হাঁটু, গোড়ালি, হাতের কবজি, কনুই ও কোমরে ব্যথা হয়, ফুলে যায় ও লালচে বর্ণ ধারণ করে। প্রথমে যেকোনো একটি গিরায় ব্যথা ও ফোলা থাকে, সেই গিরার ব্যথা ও ফোলা ২-৩ দিন পর কমে গিয়ে আরেকটি গিরাকে আক্রান্ত করে। এভাবে প্রদাহ এক গিরা থেকে অন্য গিরায় ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ে।
৬. মেজাজ খুব খিটখিটে হয়।
৭. হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অযথা কাঁপতে থাকে।
৮. চামড়ার নিচে সিমের বীচির মতো আকৃতির, শক্ত ও ব্যথাযুক্ত ছোট দানা দেখা যায়। এগুলো সাধারণত কনুই, ঘাড়, কবজি বা পায়ের সামনের দিকে দেখা যায়।
প্রতিরোধ : অস্বাস্থ্যকর ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ বা বস্তি এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যেই এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। অতএব এই রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রথমেই আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। এছাড়াও প্রয়োজনীয় কিছু মৌলিক স্বাস্থ্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
চিকিৎসাঃ ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের ছেলে-মেয়েদের গলায় প্রদাহ বা গলা ব্যথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করানো হলে বাতজ্বরের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এই ব্যবস্থাকে প্রাথমিক প্রতিরোধক ব্যবস্থা বলে। চিকিৎসা খুবই সহজ। শুধুমাত্র একটি বেনজাথিন পেনিসিলিন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যারা এক বা একাধিকবার বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বা বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে ভুগছে তাদের জন্য এই প্রতিরোধক ব্যবস্থা প্রযোজ্য। এই ব্যবস্থায় প্রতি ৩-৪ সপ্তাহ অন্তর অন্তর একটি বেনজাথিন পেনিসিলিন ইনজেকশন নিতে হয়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দিনে দুইবার পেনিসিলিন ট্যাবলেট সেবন করা যায়। যেসব ছেলেমেয়ে বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু হৃদযন্ত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি তাদের ৫ বছর এই প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে প্রয়োজনে ২২ বছর পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে এই ব্যবস্থা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত অথবা আজীবন নিতে হবে।
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق