الاثنين، 17 يناير 2011

ধূমপান: মিনিটেই দেহের ক্ষতি

ঢাকা, জানুয়ারি ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)--- ধূমপানের কারণে কয়েক বছর নয়, বরং কয়েক মিনিটেই শরীরের ক্ষতি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা এমনটাই বলেছেন।

'কেমিক্যাল রিসার্চ ইন টক্সিকোলোজি'তে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের পর শরীরে 'পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন' (পিএএইচ)-এর মাত্রা বেড়ে যায়।

শরীরে পিএএইচ অন্য একটি রাসায়নিক উপাদানে রূপান্তরিত হয় যা ডিএনএ'র ক্ষতি করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।

এ পুরো প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে এবং প্রথম সিগারেট খাওয়ার পরেই এটা ঘটতে শুরু করে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।

'ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা'র অধ্যাপক স্টিফেন হেচ বলেন, "এ গবেষণাটি অনন্য। খাবার ও বায়ু দুষণ ছাড়া কেবল ধূমপানের ওপর ভিত্তি করেই সিগারেট খাওয়ার পর মানুষের শরীরে পিএএইচ-এর যে রাসায়নিক রূপান্তর ঘটে তা প্রথমবারের মতো দেখানো হয়েছে এখানে।"

এ গবেষণাকে ধূপমান শুরু করতে আগ্রহী মানুষের জন্য সতর্কবার্তা বলে অভিহিত করেছেন ধূমপান বিরোধী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'অ্যাশ'র নীতি ও গবেষণা বিষয়ক পরিচালক মার্টিন ডকরেল। 

الجمعة، 7 يناير 2011

চুল পড়া সমস্যা

শীতকাল আসলেই চুলের সমস্যা বেড়ে যায়। এসময় বাতাসের আদ্রতা কমে যায় ফলে ত্বক ও চুল অধিক শুষ্ক হয়। চুলে দেখা দেয় খুশকি। অনেক ক্ষেত্রে মাথার ত্বকের উপরের আবরণ উঠতে থাকে। মাথায় নানা ধরনের র্যাশ বা দানা উঠে। শুধুমাত্র সঠিক পরিচর্যা ও সামান্য ওষুধ ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যায়। যদি মাথায় খুশকি দেখা দেয় তাহলে কিটোকোনাজল শ্যাম্পু যেমন ড্যানসেল, নিজোডার, সিলেক্ট পস্নাস ইত্যাদি সপ্তাহে ২দিন ব্যবহার করলে খুশকি চলে যায়। পাশাপাশি মাথার ত্বকে র্যাশ হলে বা দানা হলে প্রতিদিন গোসলের পর মাথার ত্বকে ক্লোবিটাসল প্রোপিয়নেট যেমন ডার্মোভেট, নিকলোভেট স্কাল্প লোশন ব্যবহার করলে এ ধরণের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এসব ওষুধ বা শ্যাম্পু একমাসের বেশী ব্যবহার না করা ভালো। এ ছাড়া মাথায় প্রতি সপ্তাহে একদিন তেল ব্যবহার করা ভালো। রাতে তেল ব্যবহার করে পরের দিন সকালে স্বাভাবিক শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে যে কোন কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। প্রতি সপ্তাহে ২ দিন কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি সপ্তাহের অন্যান্য দিনে যে কোন স্বাভাবিক শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ওয়াশ করতে পারেন। শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করা ভালো। এতে চুল মসৃন ও সিলকি হয়। ফলে চুলপড়া কমে। এসব পরিচর্যা করার পরও যদি চুলের সমস্যা না কমে বা চুল পড়তে থাকে তাহলে আপনার নিকটস্থ একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।



ডা: মোড়ল নজরুল ইসলাম, চুলপড়া, চর্মরোগ ও এলার্জি এবং যৌন সমস্যা বিশেষজ্ঞ, কন্স্যালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট, ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা

প্রোস্টেট প্রদাহ এবং করণীয়

প্রোস্টেট সংক্রান্ত কতিপয় সমস্যা সম্পর্কে অনেক লোকই অনেক কিছুই জানেন, যেমন প্রোস্টেটের স্ফীতি কিংবা প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি। কিন্তু প্রোস্টেট প্রদাহ এমন একটি বিরল সমস্যা, যার কথা কদাচি শোনা যায়। সাধারণভাবে বলতে গেলে প্রোস্টেট গ্রন্থির সংক্রমণ বা প্রদাহই প্রোস্টেট প্রদাহ। প্রোস্টেট প্রদাহ কয়েক রকমের হয়। এ সমস্ত সমস্যা জীবন বিপন্নকারী না হলেও সমস্যাগুলো বোঝা দুরূহ। তদুপরি রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাও দু:সাধ্য ব্যাপার।


প্রদাহ: অতি সম্প্রতি আপনার যদি মূত্রথলে বা মূত্রাশয়ের সংক্রমণ হয়ে থাকে, মূত্রাশয়ে যদি ক্যাথিটার প্রবিষ্ট করিয়ে থাকেন, আপনার প্রস্রাব যদি পুরোপুরি বের না হয়, তাহলে আপনার প্রোস্টেট সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। অল্পসংখ্যক লোকের খেত্রে দেখা গেছে, জগিং, সাইকেল চালানো, ঘোড়ায় চড়া ইত্যাদি কারণে প্রোস্টেট প্রদাহ ঘটে থাকে। ভারী জিনিস উত্তোলন করলেও এ রকম হতে পারে।


১৮ থেকে ৫০ বছর বযসীদের বেলায় এ সমস্যা সচরাচর হয়ে থাকে। তবে এর চেয়ে অধিক বয়সীরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ১২ ভাগ লোক তাদের জীবনের কোনো এক সময়ে প্রোস্টেট প্রদাহের কারণে চিকিৎসকের মুখোমুখি হন। এ রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত দুরূহ। আপনার গ্রন্থি প্রদাহিত কিংবা সংক্রমিত হয়েছে কিনা, সেটা বোঝার জন্য মলদ্বারের ডিজিটাল পরীক্ষা করতে হবে। গ্রন্থি ম্যাসাজ বা মর্দন করার প্রয়োজন হলে আপনাকে আগে ভাগেই মলত্যাগ করতে হবে। উদ্দেশ্য, প্রোস্টেট থেকে তরল সংগ্রহ করে সংক্রমণ হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করা দেখা। সংক্রমণ যদি একিউট হয়, তাহলে ম্যাসাজ এমনকি পরীক্ষার প্রয়োজনও না হতে পারে। প্রোস্টেট প্রদাহ চার ধরনের এবং এগুলোর লক্ষণও ভিন্ন।


একিউট ব্যাকটেরিয়াল প্রোস্টেট প্রদাহ: সবচেয়ে বিরল কিন্তু সবার চেয়ে অধিক সুস্পষ্ট ধাঁচের সমস্যা হলো একউিট ব্যাকটেরিয়াল প্রোস্টেট প্রদাহ। মূত্রনালী কিংবা বৃহদান্ত্রে বসবাসরত ব্যাকটেরিয়ার কারণে এ ধাঁচের সংক্রমণ ঘটে। এ রোগের লক্ষণসমূহ চাঙ্গা হয়ে উঠে হঠাৎ করেই। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, শৈত্য, ফ্লু সদৃশ অনুভূতি, পিঠের নিম্নাংশে ব্যথা, প্রস্রাবের চাপাধিক্য, রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব, রাগমোচনের সময় পুরুষাঙ্গে ব্যথা, ব্যথার কারণে প্রস্রাবে কষ্ট, প্রস্রাবে জ্বালা, প্রস্রাবের ক্ষীণ প্রবাহ ইত্যাদি। এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্না হতে হবে।


ক্রনিক ব্যাকটেরিয়াল প্রোস্টেট প্রদাহ: এ সমস্যাও ঘটে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণেই। একিউট প্রোস্টেট প্রদাহের অব্যবহিত পরেই এ ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে, সম্ভবত মূত্রনালীতে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া কিংবা রক্তবাহিত সংক্রমণের কারণেই। লক্ষণসমূহ একিউট প্রোস্টেট প্রদাহের অনুরূপ। তবে এর আক্রমণ কম তীব্রতা সম্পন্ন এবং আক্রমণ শুরু হয় একটু ধীর গতিতে।


ক্রনিক পেলভিক পেইন সিনড্রোম (দীর্ঘস্থায়ী প্রোস্টেট প্রদাহ): এটি সবচেয়ে সাধারণ ধাচের প্রোস্টেট প্রদাহ বটে। তবে এর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সবচেয়ে দূরূহ। কারণ রোগটি কিসে ঘটে তা আজও জানা সম্ভব হয়নি। লক্ষণসমূহ একিউট প্রোস্টেট প্রদাহের অনুরূপ। তবে পার্থক্য এই যে, রোগীর প্রস্রাবে কিংবা প্রোস্টেট তরলে কোনো ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় না এবং রোগী জ্বরেও আক্রান্ত হন না।


এসিম্পটোমেটিক ইনফ্লেমেটরি প্রোস্টেট প্রদাহ: এ রোগের কোনো লক্ষণ নেই। ইলেভেটেড প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন (স্প্রা) এর কারণ খুঁজতে গিয়ে এ রোগ ধরা পড়ে।


চিকিৎসা: প্রোস্টেট প্রদাহের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। সকল লক্ষণযুক্ত প্রোস্টেট প্রদাহের চিকিৎসা করা হয় এন্টিবায়োটিকের সাহায্যে। একিউট ব্যাকটেরিয়াল প্রোস্টেট প্রদাহের ক্ষেত্রে, কয়েক সপ্তাহ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে উপকার হয়। তবে সবটাই নির্ভর করে ওষুধের কতটা প্রভাব আপনার উপর পড়ছে, তার উপর। ক্রনিক ধাঁচের রোগের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয় অধিককাল। কয়েক মাসও চিকিৎসা চলতে পারে। সংক্রমণ পুনরায় শুরু হলে আবার ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। প্রোস্টেট গ্রন্থি অনেকগুলো গ্রন্থির সংযোগস্থল। গ্রন্থি সংক্রমিত হলে এখানে কেলসিয়াম জমা হতে পারে। ফলে প্রোস্টেট টিসু্যতে ঠিকমত ওষুধ পৌছতে সমস্যা হয়। রোগ থেকে আরাম পেতে নিম্নোক্ত ওষুধগুলোও ব্যবহূত হতে পারে:
০০আলফা বস্নকার্স। এটি প্রস্রাবের প্রবাহকে সুগম করে।
০০ব্যথানিরোধক ওষুধ। এগুলো স্বস্তি ফিরিয়ে আনে। সংবেদনশীল স্নায়ুর ব্যথাচক্রও ভেঙ্গে দেয় এ ওষুধ।


উপরন্ত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থেরাপিস্ট আপনাকে কতিপয় ব্যায়াম ও শস্নথন কৌশলে অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন। এতে আপনার শ্রেণীর পেশীর টেনশন দূর হবে। মানসিক চাপ কমাতে বায়োফিডব্যাকও সহায়তা দেবে। গরম ন্যাকড়া দিয়ে ব্যথাযুক্ত স্থানে সেক দিলে কিংবা ঈষদুষ্ণ পানিতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলেও উপকার পাবেন।

লাল মাংস নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়

যে সমস্ত নারীরা লাল মাংস বেশী খান তাদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সুইডিশ নারীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।



সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের কারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটের ডঃ সুসানা লারসন ও তার সহকর্মী গবেষক দল এ গবেষণা করেছে।


ডঃ সুসানা ও তার দল ৩৯ থেকে ৭৩ বছর বয়সী ৩৪,৬৭০ জন নারীর ওপর ১০ বছর ধরে গবেষণা করে এ ফলাফল তুলে ধরেন।

১৯৯৭ সালে গবেষণা শুরুর সময় এই নারীরা কেউই হৃদরোগ বা ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন না। ১০ বছরের মধ্যে তাদের ১,৬৮০ জন স্ট্রোক আক্রান্ত হন।


গবেষকদল দেখতে পান প্রতিদিন সবচেয়ে বেশী ৮৬ গ্রাম লাল মাংস খান এমন পাঁচজন, যারা প্রতিদিন ৩৬.৫ গ্রাম লাল মাংস খান তাদের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশী স্ট্রোক হওয়ার (সেরিব্রাল ইনফ্রাকশন) ঝুঁকিতে আছেন।
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কাজে নিয়োজিত ধমনীতে কোন কিছু (সাধারণত চর্বি) আটকে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণত স্ট্রোক হয়; একে সেরিব্রাল ইনফ্রাকশনও বলে।
তাছাড়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও এখনও অজ্ঞাত এমন কারণেও স্ট্রোক হয়, তবে এর হার তুলনামূলক কম।
গবেষণায় দেখা যায়, রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে স্ট্রোক হওয়ার হার শতকরা ৭৮ ভাগ।

যে নারীরা প্রতিদিন ৪১.৩ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস খান তারা প্রতিদিন ১২.১০ গ্রাম মাংস গ্রহণ করা নারীদের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশী সেরিব্রাল ইনফ্রাকশনের ঝুঁকির মুখে আছেন।


গবেষণায় সেরিব্রাল ইনফ্রাকশন ছাড়া অন্য ধরনের স্ট্রোক ঝুঁকির সাথে লাল বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
লাল মাংস ধূমপায়ীদের চেয়ে অধূমপায়ীদের জন্য বেশী ঝুঁকিপূর্ণ।
নারীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের চেয়ে যারা ডায়াবেটিস রোগী নয় তাদের জন্য লাল মাংস বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।


অধূমপায়ী ও ডায়াবেটিসহীনদের ক্ষেত্রে লাল মাংসে সেরিব্রাল ইনফ্রাকশন ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী, শতকরা ৬৮ ভাগ।
লাল ও প্রক্রিয়াজাত উভয় মাংসই রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয় যা স্ট্রোকের প্রধান কারণ। লাল মাংসে থাকা আয়রন মুক্ত র‌্যাডিকেল বাড়িয়ে তোলে যা শরীরের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।


প্রক্রিয়াজাত মাংসে সোডিয়াম থাকে। এটি রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটায়।

বিকল্প শিশু খাদ্য খাওয়ানোর প্রবণতা বাড়ছে

জন্মের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিকল্প শিশু খাদ্য খাওয়ানোর প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে।
অপুষ্টিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বিকল্প খাদ্য অর্থাৎ গুড়ো দুধ শিশুদের দিচ্ছেন মায়েরা।
সরকারের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বলছে, জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ এবং ছয় মাসের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। বিকল্প খাদ্য বা অন্য কিছু খাওয়ানো হলে তা হবে শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এমনকি শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. ফাতেমা পারভীন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অনেক মা-ই শিশুকে সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না। এ কারণে বাচ্চারা বুকের দুধ খেতে চায় না। মা তখন শিশুর কথা ভেবে বিকল্প খাদ্য হিসেবে গুড়ো দুধ বোতলে ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। শিশু একবার বোতলে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বুকের দুধ খাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।"

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার স¤প্রতি দেশব্যাপী কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

বেশিরভাগ অভিভাবকই অসচেতনতার কারণে শিশুকে বিকল্প খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানীর বাজারজাত করা গুড়ো দুধ ও অন্য খাদ্য খাওয়াচ্ছে।
স¤প্রতি সরেজমিনে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউণ্ডেশনের প্রধান ড. এস কে রায় বিকল্প খাদ্যকে শিশুর জন্য আত্মঘাতী উল্লেখ করে বলেন, "এর ফলে শিশু মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই স্বাভাবিক খাবার খাওয়ার চাহিদা কমে যায়। এমনকি বুকের দুধ কিংবা বাড়তি খাবারও সে খেতে চায় না। ফলে শিশু অপুষ্টিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়।"
এই বিকল্প শিশু খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ১৯৮৪ সালে প্রণয়ন করা দি ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউ (রেগুলেশন অব মার্কেটিং) অধ্যাদেশ থাকলেও তা এখন প্রায় অকার্যকর। এই অধ্যাদেশটিকে সংশোধন করে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারলে অনেকখানি সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বিকল্প শিশু খাদ্যকে 'না' বলুন, এমন প্রচারণা সরকার এবং জনগণ সবার পক্ষ থেকে শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।

শিশুর জন্য আত্মঘাতী হলেও কেন বিকল্প খাদ্য খাওয়ানো হচ্ছে অভিভাবকদের কাছে এ প্রশ্ন করলে নানা উত্তর পাওয়া যায়।
সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের একটি গ্রাম পূর্বকালিনগর। এই গ্রামের ১৮ মাস বয়সী শিশু কল্লোলের মা চন্দনা রানী জোয়াদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার বুকের দুধ কম। তাই বাচ্চাকে ছয়/সাত মাস বয়স থেকে বাজারজাত কৌটার গুড়ো দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।"
শিশুর স্বাস্থ্য ভালো হবে- এ কথা ভেবেই কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই দুধ খাওয়ালে শিশু অপুষ্টিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে- এ কথার জবাবে তিনি বলেন, "ওসব আমার জানা নেই। আশপাশের অনেকেই তো খাওয়াচ্ছে।"
কল্লোলের বাবা রবীন্দ্রনাথ জোয়াদ্দার বলেন, "ভারতের একটি কোম্পানীর তৈরি গুড়ো দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানো হচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভারতের গুড়ো দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এসব দুধ খাওয়াতে কেউ কখনো মানা করেনি।"

শুধু এই গ্রাম নয়, পাশের গ্রামেও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল গত কয়েক বছরের তুলনায় এলাকায় শিশুদের গুড়ো দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা বাড়ছে।
অন্য একটি গ্রাম দক্ষিণ কদমতলা। এই গ্রামের ১৩ মাস বয়সী শিশু ফারজানার মা শামীমা আক্তারের কাছে কৌটার দুধ খাওয়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, "টেলিভিশন খুলেই তো দেখা যায় কৌটার দুধের বিজ্ঞাপন। এই দুধ খাওয়ালে শিশুর পুষ্টি হয়। স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই এগুলো খাওয়ানো হয়।"

একই গ্রামের আট মাস বয়সী শিশু রূপার মা রওশন আরা পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চাকে কৌটার দুধ, চালের গুড়াসহ বিস্কুট, কলা ইত্যাদি খাবার খাওয়ানো হয়।"
রূপার বাবা মৎস্যজীবি রবিউল ইসলাম বলেন, "এলাকার মানুষের ধারণা, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে যে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর কথা বলা হয় তাতে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই বাচ্চাকে কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "গত কয়েক বছরের তুলনায় এই এলাকায় এখন কৌটার দুধ খাওয়ানোর একটা ঝোঁক প্রতিটি পরিবারেরই দেখা যায়।"
ড. এস কে রায় আরো বলেন, "মায়ের দুধের মতো পুষ্টিকর উপাদান টিনজাত দুধ থেকে পাওয়া যায় না। টিনজাত দুধ খেলে নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। রোগের কারণে স্বাস্থ্য ভালো হয় না এবং মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে না।"
শিশুকে বুকের দুধ না দিলে মায়েরাও নানা সমস্যায় ভোগেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "মায়ের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। কারণ, বুকের দুধ না খাওয়ালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মায়ের শরীরে চর্বি জমে যায়।"
টিনজাত দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, "এখন বিক্রেতারা সরাসরি মায়ের কাছে গিয়ে দুধ বিক্রি করছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ থেকে এই দুধ বিক্রি বন্ধ করার কিংবা মায়েদের তা না কেনার জন্য বলা হচ্ছে না।"
তিনি বলেন, "মায়েদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। কৌটার গায়ে লেখা থাকতে হবে মায়ের দুধের সমকক্ষ কোনো দুধ নেই। কৌটার দুধের সব ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে।"
"এছাড়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো অবস্থাতেই শিশুকে কৌটার দুধ দেওয়া যাবে না বলে আইন করতে হবে", বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব মো. হুমায়ন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অধ্যাদেশটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা ছাড়া শুধু আইন করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না।"

শীতে সতর্ক থাকুন

শীত এসে গেছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায় এ সময়। ত্বকেরও জলীয় অংশ চলে যায় বাতাসে। তাই ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত সাবান ব্যবহারেও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব [সেবাম] কমে যায় এবং ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে যায়, বিশেষ করে শীতকালে। শুষ্কতার সমস্যা যাদের আছে তারা সাবান একটু কমই ব্যবহার করবেন এ সময়। আর যদি ব্যবহার করতেই হয় তবে বিভিন্ন ধরনের গিল্গসারিন সোপ বা ক্ষার খুব কম [যেমন_ ডোভ সাবান বা অয়েলেটাম সাবান] সে রকম সাবান ব্যবহার করাই ভালো। ত্বকে যদি সামান্য শুষ্ক ভাব হয় তবে যে কোনো অয়েল ব্যবহারই যথেষ্ট যেমন_ অলিভ অয়েল বা বেবি অয়েল। শুষ্কতার পরিমাণ যদি একটু বেশি হয় তবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারই উত্তম। গিল্গসারিনই হচ্ছে ভালো ময়েশ্চারাইজার। ময়েশ্চারাইজার অবশ্য গোসলের পর শরীর মুছে ত্বকে ভেজাভাব থাকা অবস্থায়ই মেখে দিতে হবে। গিল্গসারিন মাখার ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত আঠাভাব অনেকের পছন্দ নয়। সে ক্ষেত্রে ভেজা তোয়ালে বা গামছা কিংবা যে কোনো ভেজা কাপড় চিপে নিয়ে আলতোভাবে চেপে চেপে অতিরিক্ত আঠাভাব উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে ঘষা দেওয়া যাবে না, তাতে পুরো গিল্গসারিন মুছে যেতে পারে।



শুষ্কতার কারণে যদি ত্বক ফেটে চৌচির হয়ে যায়, বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি এবং ঠোঁট। তবে ইমোলিয়েন্ট ব্যবহার করতে হবে। অয়েলেটাম ইমোলিয়েন্ট শিশুদের ত্বকে খুবই উপকারী। তবে সাধারণের জন্য সবচেয়ে ভালো ইমোলিয়েন্ট হচ্ছে ভ্যাসলিন। ভ্যাসলিন যে কোনো অবস্থায়ই [শুষ্ক অথবা ভেজা ত্বক] মাখা যায়। তবে ভেজা অবস্থায় মাখলে উপকার বেশি। আহারের সময় ঠোঁট অনেকক্ষণ ভিজতে থাকে এবং আহার শেষে সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যাসলিন ঠোঁটে মেখে দিলে ভেজা ভাবটা থেকে যায় এবং ফাটা থেকে ঠোঁট রক্ষা পায়। তবে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর চেষ্টা করলে তাতে ঠোঁট ফাটা তো কমেই না, উপরন্তু অ্যালার্জি ভাব দেখা দেবে এবং এই অ্যালার্জি ঠোঁটের আশপাশের ত্বক পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। পায়ের গোড়ালির ফাটাকে ঝামা দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে। সোরিয়াসিসের প্রবণতার কারণে যদি গোড়ালি ফাটে তবে অতিরিক্ত ঘষায় সোরিয়াসিস বেড়ে যেতে পারে। তবে গোসলের সময় পায়ের গোড়ালি সামান্য ঘষে তাতে ভেজা ভাব থাকা অবস্থায় ভ্যাসলিন মাখলে গোড়ালি ফাটবে না। শীতে প্রতিদিনের মোজা প্রতিদিন যদি ধোয়া না হয়, রাতে ঘুমানোর আগে পা যদি ভালোভাবে ধোয়ার অভ্যাস না থাকে তবে পায়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে। তাই জুতায় গন্ধ লেগে যাওয়ার আগেই মোজা বদলে নিতে হবে, পা ধুয়ে নিতে হবে। জুতায় গন্ধ লেগে গেলে আর মোজা বদলে লাভ নেই। অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা থাকলে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের কয়েকটি দানা হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ২০ মিনিট পা ভেজাতে হবে একাধারে ৭-১৪ দিন। পরবর্তী সময়ে সপ্তাহে একবার পা ভেজালেই হবে। তবে পানিতে পটাশের পরিমাণ যেন বেশি না হয়। পায়ের গোড়ালি ফাটা রোধে শীতে কিছুটা সময় হলেও প্রতিদিন গোড়ালি ঢাকা থাকে এমন স্যান্ডেল বা জুতা পরা উচিত। পায়ে মোজাও পরা যেতে পারে। শীতে অনেকের একটুতেই হাঁচি হয়, নাক বন্ধ থাকে। এগুলো ঠাণ্ডা ও ধুলা-বালিজনিত। এজন্য ঠাণ্ডা ও ধুলা এড়িয়ে চলতে হবে। নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরলে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া এসব সমস্যা এড়াতে শীতের সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই গরম কাপড় পরে নিতে হবে। পায়ে পরে নিতে হবে স্যান্ডেল। প্রয়োজনে মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবহার করতে হবে উষ্ণ পানি। শীতে হাঁপানির তীব্রতা বাড়তে পারে। এজন্য সালবিউটামল ইনহেলার বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।


শীতে ব্যবহৃত গরম কাপড়-চোপড়ের অধিকাংশই আলমারিতে তুলে রাখা থাকে। নতুন করে শীতের কাপড় গায়ে চাপানোর আগে তা রোদে দেওয়া উচিত। কারণ এসব কাপড়ের মধ্যে বিভিন্ন স্পোর থাকতে পারে, যা সহজেই হাঁচি-সর্দি-কাশি হতে পারে। তবে একটু রোদে দিলেই এসব স্পোর মরে যায়। তাই ব্যবহারের আগে আলমারি থেকে শীতবস্ত্র নামিয়ে কয়েক ঘণ্টা রোদে দিয়ে নিন।


ডা. সজল আশফাক
সহযোগী অধ্যাপক
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

الخميس، 6 يناير 2011

বিষণ্নতার মূলে জিনের কারসাজি

হাসিখুশি থাকতে পারাটা ভালো। এতে অনেক জটিলতা কেটে যায়। হাসিমুখে বসে বিবেচনা করলে অনেক জটিল সমস্যার গ্রন্থি পর্যন্ত খুলে যায়। মাথা গরম করে কিংবা মনভরা বিষাদ নিয়ে কাজ করলে অনেক সময় সহজ জিনিসটাও গোলমেলে ঠেকে। চিকিত্সকরা তাদের রোগীদের হাসিখুশি থাকতে বলেন। রোগের চিন্তায় মাথা বোঝাই না করে সুন্দর ও উপভোগ্য কিছু করতে বা ভাবতে বলেন। এতে রোগের অনেকটা উপশম ঘটে বলে মনে করেন তারা।



আজকাল আকছার হার্টের রোগ হচ্ছে। রক্তের চাপ বাড়ছে। সাংসারিক নানা ঝামেলায় মন সারাক্ষণ বিক্ষিপ্ত কিংবা বিষণ্ন থাকে। এতে মানুষের অকালমৃত্যু ত্বরান্বিত হয় বলে বিশ্বাস করেন মনোচিকিত্সকরা। চিকিত্সকদের এসব কথা শুনে এটা মনে হতে পারে, বিষণ্নতা নেহাতই মনের একটা বিশেষ অবস্থা এবং চাইলে এটাকে ঝেড়ে ফেলা যায়। তবে সম্প্রতি আমেরিকাপ্রবাসী এক বাঙালি মনোবিজ্ঞানী বিষণ্নতার মূলে একটা জিনের কারসাজি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, অন্যান্য রোগ যেমন জিনের কারণে হয়ে থাকে, তেমনি বিষণ্নতার মূলেও রয়েছে জিনঘটিত ব্যাপার-স্যাপার। সূত্র দ্য মেইল


নতুন এই গবেষণায় এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এমন এক জিন রয়েছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের সেরোটনিনে মিশে তার মানসিক অবস্থাকে জটিল করে তোলে। এর প্রভাবে মানুষ এমনকি তার মানসিক শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলতে পারে এবং নিজেকে শেষ করে দিতে পর্যন্ত প্রণোদিত হতে পারে।


যুক্তরাষ্ট্রের মিসিগান ইউনিভার্সিটির মনোবিদ্যার অধ্যাপক ড. সৃজন সেন আর্কাইভস অব দ্য জেনারেল সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে লিখেছেন, বাল্যকালে আপনি কোনো সমস্যায় পড়েছিলেন। সেটা যত ভয়ঙ্করই হোক, সময়ের ধুলো তার ওপর বিস্মৃতির প্রলেপ ফেলবেই। কিন্তু মস্তিষ্কের সেরোটনিনে ওই জিনের উপস্থিতি থাকলে ওই ভয়ঙ্কর স্মৃতি ভবিষ্যতেও মানুষের মনে তার পুরো বিরূপতা নিয়ে দেখা দিতে পারে। ওই স্মৃতি মানুষের মনে স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দিতে পারে। ওদিকে একজন মানুষ সাংসারিক জটিলতা কিংবা শারীরিক অসুস্থতাকে খুব বড় করে দেখে—তার মনে যে কোনো ঝুট-ঝঞ্ঝাট সমাধানের অতীত বলেই প্রতিভাত হয়। এরই কারণে কখনও সে বিক্ষিপ্ততায় ভোগে কিংবা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়।


মানুষের বিষণ্নতার কারণ হিসেবে আগেও অবশ্য জিন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বলা হয়েছিল। সেটা ২০০৩ সালের কথা। সে সময় এটা নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও ড. সেনের এই গবেষণা আগের সে গবেষণাকেই নতুন এবং আরও শক্ত করে উপস্থাপিত করেছে।

الأربعاء، 5 يناير 2011

পৃথিবীর সেরা স্বাস্থ্যকর খাবার

প্রতিদিন কোন খাবার খাব বা কোন খাবারে শরীরের কী উপকার করে, তার কতটুকুই বা আমরা জানি। ভালো খাবার যেমন ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখে, তেমনি খারাপ খাবার ডেকে আনে বিড়ম্বনা। সবকিছু চিন্তা করে আমেরিকান ওয়েবসাইট ‘লাইভ হেলথ কাব’ নির্বাচন করেছে পৃথিবীর সেরা কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার। আসুন জেনে নেওয়া যাক।



জাম
জাম একটি আঁশযুক্ত ফল। সব ধরনের জামই কম শর্করাসমৃদ্ধ এবং বেশি আঁশযুক্ত, যা যে কোনও বয়সী মানুষের স্বাস্থের জন্য উপকারি। এটি স্মৃতি বাড়ায় এবং গবেষণা ও পড়ালেখায় উৎসাহ যোগায়। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, ফলটি ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।


শিম, বরবটি এবং মটরশুঁটি
শিম, বরবটি এবং মটরশুঁটি অতি আঁশযুক্ত একটি খাবার। এগুলো শরীরের ওজন এবং রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া মলাশয় ক্যানাসার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। আমেরিকার ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন’ মনে করে প্রতিদিন প্রত্যেকের খাবারে ২৫-৩৮ গ্রাম আঁশ খাওয়া উচিত। এক কাপ শিমে ১১-১৭ গ্রাম আঁশ থাকে।


বাদাম
যারা সপ্তাহে কয়েক দিন বাদাম খান আর যারা খান না তাদের মধ্যে দীর্ঘ এবং গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় দেখা গেছে, বাদাম খাওয়া ব্যক্তিরা ৩০ থেকে ৫০ ভাগ হার্ট এটাকের ঝুঁকিমুক্ত। সাথে সাথে অন্যান্য হৃদরোগ থেকেও ঝুঁকিমুক্ত। কেউ যদি সপ্তাহে কয়েক দিন এক আউন্স পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের বাদাম খান তবে আশ্চর্য সুফল পাবেন। বাদাম চুলের জন্যও উপকারী।


ওয়াইল্ড স্যামন
সামুদ্রিক এ মাছটি ইউরোপ এবং আমেরিকান খাবার হিসেবেই পরিচিত। সাধারণভাবে যে কোনও মাছই বার্ধক্য রোধ করে, তবে এ মাছটি বেশি উপকারী। এ মাছে ওমেগা থ্রি নামে যে চর্বি থাকে তা হৃদপি- এবং মস্তিস্ককে রক্ষা করে। এ ছাড়া এটি মানসিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।


প্রাকৃতিক দুধ
অপরিশোধিত দুধ যা সাধারণত ঘাস খাওয়া গরু থেকেই আসে। প্রাকৃতিক এ দুধ ক্যান্সারের সাথে শক্ত-সামর্থ্যভাবে লড়তে পারে। দুধ যেমন শক্তিশালী ভিটামিনের উৎস, তেমনি এতে আছে খনিজ পদার্থ যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।


তৃণভোজী প্রাণির মাংস
ঘাস খাওয়া গরুর মাংস এবং বাজারে বিক্রি হওয়া সাধারণ মাংসের নানা পার্থক্য রয়েছে। এর মাংসে এক ধরনের চর্বি আছে যা ক্যান্সার রোধে সহায়ক। এটি প্রাণিজ আমিষ এবং ভিটামিন বি-১২ এর চমৎকার উৎস ।


ডিম
বিভিন্ন দিক বিবেচনায় দেখা যায়, ডিম অন্যতম একটি পরিপূর্ণ খাবার। ডিমে আমিষ থাকে বেশি কিন্তু সে তুলনায় ক্যালরি থাকে স্বল্প পরিমাণে। ডিমের কুসুমে থাকা ‘কোলিন’ মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী । এর মধ্যে আছে চোখের জন্য খুব দরকারি উপাদান। বাঁধাকপি এবং ফুলকপির মতো এটিও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া এতে আছে নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ এবং ক্যালসিয়াম।


আপেল
আপেল যে শুধু খেতে সুস্বাদু তা নয়, এটি ক্যান্সার এবং হাঁপানি রোধে সহায়তা করে। একটি আপেলে ৫ গ্রাম আঁশসহ নানা রকমের উন্নত ভিটামিন থাকে। যেমন এতে আছে হাড় মজবুতকারী ভিটামিন ‘কে’। ফুসফুসের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণেও এটি সমানভাবে কাজ করে। বড় ধরনের কোনও ভোজের আধ ঘণ্টা আগে একটি আপেল খেলে খাদ্যের প্রতি আগ্রহ বিপুল পরিমাণে বাড়বে।


পেঁয়াজ এবং রসুন
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজ এবং রসুন পাকস্থলী, প্রোস্টেটসহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। ফুলকপি, চা এবং পেঁয়াজ-রসুন এমন ধরনের খাবার, যা মানুষের হৃদরোগজনিত শতকরা ২০ ভাগ মৃত্যু প্রতিরোধ করে।


ডালিম শরবত
‘তেল আবিব ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা ডালিমের শরবতকে ‘প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা’ বলে অভিহিত করেছেন। এটি রক্তসঞ্চালনে যেমন সহায়তা করে, তেমনি দাঁতের ব্যাকটেরিয়াও দমন করে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি টিউমারও প্রশমন করে। ডাক্তারদের মতে, দৈনিক ৪-৮ আউন্স ডালিম শরবত বেশ উপকারী।


সবুজ চা
যদিও সব ধরনের চা আপনার জন্য ভালো, তারপরও সবুজ চা আপনার জীবনে আলাদা জায়গা করে নেবে শুধু ক্যান্সার রোধের কারণে। এটি মূত্রাশয়, মলাশয়, অগ্ন্যাশয় এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার রোধে কাজ করে । এছাড়া এটি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

কাঁচা পেঁপের ৭টি ঔষধি গুণ

যেসব মায়ের সদ্য বাচ্চা হয়েছে কাঁচা পেঁপের তরকারি নিয়মিত খেলে তাদের স্তনের দুধ বাড়বে।


ওষুধ হিসেবে কাঁচা পেঁপের গুণ পাকা পেঁপের চেয়ে বেশি। পেপটিন বা পেঁপের আঠার গুণ অনেক।


কাঁচা পেঁপের আঠা বা দুধের আর একটি গুণ হলোÑ হজম সম্পর্কিত যে কোনো অসুখেই এটি কাজ দেয়।


প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এবং রাতে ভাত বা রুটি খাওয়ার পর এক টুকরা কাঁচা পেঁপে ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে এক গ্লাস পানি খেলে সকালে পেট পরিষ্কার হয়।


কাঁচা পেঁপে বা পেঁপে গাছের আঠা পেটের অসুখ, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি রোগের জন্য বিশেষ উপকারী।


পেঁপের তরকারি নিয়মিত খেলে পেটের পীড়া বা উদরাময়ে উপকার হয়।


আমাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার অদ্ভুত শক্তি আছে কাঁচা পেঁপের আঠায়।

এই শীতে তুলসী পাতা

তুলসী সবুজ রঙের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। তুলসীগাছের পাতা, বীজ, ডালপালা—সবকিছুই মানুষের উপকারে লাগে। এই শীতে সর্দি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বরজ্বর ভাব দূর করার জন্য তুলসী পাতার রস ভীষণ উপকারী। তুলসী পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানিতে গড়গড়া করলে মুখ ও গলার রোগজীবাণু মরে, শ্লেষ্মা দূর হয়, মুখের দুর্গন্ধও চলে যায়। তুলসী পাতা কয়েক ফোঁটা মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে চিবিয়ে খেলে ফুসফুস, কণ্ঠনালি, দাঁতের গোড়া, মাড়ি ভালো থাকে। তুলসী পাতার রস পেট ব্যথা, পেটের বা পাকস্থলীর রোগজীবাণুকে দূর করে, রক্ত পরিষ্কার করে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ম্যালেরিয়া জ্বরে তুলসী পাতা খেলে জ্বর দ্রুত ভালো হয়। ত্বকের লাবণ্য রক্ষার্থে, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধামান্দ্য, বদহজম দূর করতে তুলসী পাতার ভূমিকা অপরিহার্য। তুলসী চা শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর করে, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে মানুষের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়, রোগ-প্রতিরোধশক্তি দ্বিগুণ হয়। উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হূৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। হাড়ের গাঁথুনিতে ব্যথা দূর করে এবং শরীরের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে অবদান রাখে। তুলসীগাছের বীজও যথেষ্ট দরকারি। তুলসীর বীজ শুকিয়ে মিহি করে খেলে প্রস্রাবের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ভালো হয়, জননতন্ত্রের অসুবিধা দূর হয়। পুরুষত্বহীনতা দূরীকরণে এই পাতার অবদান অপরিহার্য।



এই ঠান্ডা মৌসুমে ছোট বাচ্চাদের তুলসী পাতা খাওয়ালে কৃমি দূর হবে এবং মাংসপেশি ও হাড় হবে শক্তিশালী। বহুবিধ ব্যবহারের জন্য তুলসী পাতাকে বলা হয় ‘কুইন অব হার্ব’ বা ওষধি গাছের রানি। এই ওষধি পাতা শুধু শীতকাল নয়, ১২ মাসই ব্যবহারের উপযোগী। তুলসীগাছের বাতাসও যথেষ্ট উপকারী। তাই সম্ভব হলে বাসার ব্যালকনিতে বা ফুলের টবে অন্তত একটি তুলসীগাছ লাগান।

লংগো পদ্ধতি : মলদ্বার না কেটেই পাইলস অপারেশন

জীবনে কম-বেশি পাইলসের সমস্যায় ভোগেননি এরূপ লোকের সংখ্যা খুব কম। পাইলস বলতে আমরা বোঝাই মলদ্বারে রক্ত যাওয়া, ব্যথা হওয়া, ফুলে ওঠা, মলদ্বারের বাইরে কিছু অংশ ঝুলে পড়া আবার ভেতরে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি। এর চিকিত্সা হিসেবে আদিকাল থেকে বিভিন্ন পদ্ধতি চলে এসেছে। যেমন—ইনজেকশন পদ্ধতি, রিংলাইগেশন পদ্ধতি এবং অপারেশন।



প্রচলিত চিকিত্সা পদ্ধতি ইতিহাস


ইনজেকশন পদ্ধতি ১৮৬৯ সালে আমেরিকায় শুরু হয়। এ পদ্ধতি প্রাথমিক এবং ছোট পাইলসে ভালো ফল দেয়; কিন্তু সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এরপর ১৯৬২ সালে ইংল্যান্ডে রিংলাইগেশন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়। রিংলাইগেশন পদ্ধতির ফলাফল খুব ভালো। ৮০-৯০ ভাগ পাইলস রোগী এ পদ্ধতিতে ভালো হন। কিন্তু শতকরা ১০-২০ ভাগ রোগীর অপারেশন প্রয়োজন। বিশেষ করে যাদের পাইলস বড় হয়েছে এবং বাইরে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় প্রচলিত আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা অপারেশন করে থাকি। এ অপারেশনে মলদ্বারের চতুর্দিকে তিন জায়গায় বেশকিছু জায়গা কেটে ফেলে দিতে হয়। যার ফলে অপারেশনের পর প্রচুর ব্যথা হয়, মলত্যাগের পর ব্যথা বেড়ে যায়, অনবরত সামান্য রক্ত ও পুুঁজের মতো নিঃস্বরণ হয়। যার ফলে ক্ষতস্থান শুকাতে ১-২ মাস সময় লাগে। অফিস থেকে কমপক্ষে এক মাস ছুটি নিতে হয় অপারেশনের পর, ক্ষেত্রভেদে মলদ্বার সংকুচিত হয়ে জীবন দুর্বিষহ করে তোলে আবার পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। এরূপ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে রোগীকে এক থেকে দেড় মাস কাটাতে হতে পারে। মলদ্বারের চতুর্দিকের মাংস কাটার জন্য মলদ্বারের ভেতরের অনুভূতি কমে যায়। যার জন্য মল আটকে রাখার ক্ষমতার তারতম্য হতে পারে।


লংগো পদ্ধতি


এই প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক ডা. এন্টনিও লংগো, অধ্যাপক সার্জারি, ইউনিভার্সিটি অব প্যালেরমো, ইতালি ১৯৯৩ সালে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যার নাম Longo Opeation Stapled Haemo˨oidectomy। অর্থাত্ অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে মলদ্বার না কেটে পাইলস অপারেশন। এ পদ্ধতির চিকিত্সার দর্শন যুক্তি সম্পূর্ণ আলাদা। এক্ষেত্রে পাইলসটিকে একটি ঝুলেপড়া মাংসপিণ্ড হিসেবে মনে করা হয়। এই ঝুলে পড়া মাংসপিণ্ডের ভেতর অসংখ্য শিরা মলত্যাগের সময় প্রচণ্ড চাপে রক্তপাত ঘটায়। বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে অপারেশনের ফলে ঝুলেপড়া পাইলস ভেতরে ঢুকে যাবে। এ যন্ত্রটি রেকটামের ভেতর একটি চক্রাকার মাংসপিণ্ড কেটে নিয়ে আসে। কাটা-ছেঁড়া করে ওই যন্ত্রটি আবার সেলাইও সেরে দেয়; যার কারণে কোনো ক্ষতস্থান থাকে না। আর ক্ষতস্থান থাকে না বলে শুকানোর প্রশ্নই আসে না। এ অপারেশনের পর কোনোরূপ ব্যথা হয় না। তবে মলদ্বারে কিছু নাড়াচাড়া করা হয়, যার ফলে অপারেশনের পর অল্প ব্যথা হতে পারে। এ পদ্ধতিতে পাইলসের উত্পত্তিস্থল অর্থাত্ রেকটামের ভেতর অপারেশনের ফলে পাইলসের রক্ত সরবরাহের শিরাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে গঠনগত দিক থেকে মলদ্বার সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে। মলদ্বারে সামান্যতম কোনো কাটা-ছেঁড়া নেই। এতে মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়ার সমস্যা নেই। দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘদিন বিশ্রাম বা ছুটি নেয়ার প্রয়োজন নেই। পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হওয়ার ভয় নেই। সর্বোপরি আবার পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা অতি সামান্য অর্থাত্ ২ শতাংশ।


অপারেশন যেভাবে করা হয়?


এ অপারেশনে অজ্ঞান করা হয় না; তবে কোমরের নিচের দিক অবশ করা হয়। অপারেশনের জন্য রোগীকে দুই-তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। একটি অত্যাধুনিক বিশেষ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় যেটি কিছুটা ব্যয়বহুল অর্থাত্ যন্ত্রটির মূল্য ২০ হাজার টাকা। ৫-১০ দিনের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবে। অন্যদিকে সাধারণ অপারেশন হলে রোগীকে এক থেকে দেড় মাস ছুটি নেয়া লাগতে পারে।


বিদেশে যেখানে এ জাতীয় অপারেশনে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে, সে তুলনায় আমাদের দেশে খরচ অত্যন্ত সীমিত। আমি মনে করি, সব মধ্যবিত্তের আওতায় থাকবে। রোগীরা পাইলস অপারেশন করতে চান না কয়েকটি কারণে, যেমন অপারেশনের পর মলত্যাগে ব্যথা হওয়া, ঘা শুকাতে দীর্ঘদিন লাগা, দীর্ঘদিন বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন, পায়খানা আটকে রাখার ক্ষমতা ব্যাহত হওয়ার ভয়, মলদ্বার সরু হয়ে যাওয়ার ভয় এবং পাইলস আবার হওয়ার ভয় ইত্যাদি। এ পদ্ধতিতে এ জাতীয় সব সমস্যার পূর্ণ সমাধান রয়েছে।


অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক
বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল
সাতমসজিদ রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা

প্রস্রাবের রং দেখে রোগ চেনা

আমাদের শরীর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১-২ লিটার পানি প্রস্রাব আকারে বেরিয়ে যায়। প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বের করে দেওয়ার কাজটি করে আমাদের দুটি কিডনি। সাধারণভাবে প্রস্রাবের রং পানির মতো কিংবা হাল্কা বাদামি হতে পারে। এই রং নির্ভর করে পানি পানের পরিমাণ, খাদ্য কিংবা কোনো রোগ বা ওষুধের ওপর। তবে বিভিন্ন কারণে তা ঘোলাটে, লাল, গাঢ় হলুদ, সবুজ, কমলা, নীল কিংবা সবুজ রঙের হতে পারে। কাজেই শুধু প্রস্রাবের রং দেখেই শরীরের অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া সম্ভব।



প্রস্রাবের রং অস্বাভাবিক মানেই রোগ নয়। যেমন পানি কম খেলে প্রস্রাব হলুদ হতে পারে। আবার গাজর বা ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি বেশি খেলে প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে। এমনকি যক্ষ্মার ওষুধ রিফামপিসিন কিংবা ফেনোপাইরাজিনের কারণেও প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে। তবে হেপাটাইটিস হলে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করে।


প্রচুর খাবার খেলে কিংবা ফসফেটসমৃদ্ধ খাবার যথা দুধ খেলে ঘোলাটে প্রস্রাব হতে পারে। তবে প্রচুর পানি পান করলে এই সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু এর পরও এটি না কমলে এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া থাকলে ধরে নেয়া যায় ইনফেকশনের জন্য এমন হচ্ছে।


প্রচুর পানি খেলে প্রস্রাব বর্ণহীন হয়। মেলানোমার কারণে কালো বা ডার্ক কালার হয়। এসপারাগাস খেলে প্রস্রাব সবুজ হয়। প্রস্রাব সিউডোমোনাস ইনফেকশন বা উঁচু মাত্রার ক্যালসিয়াম থাকলে প্রস্রাব হালকা নীল হয়।


বিট, ব্লাকবেরি-জাতীয় খাবারে প্রস্রাব লাল হতে পারে। তবে প্রস্রাবের রং লাল হওয়ার অন্যতম কারণ রক্ত বা রক্তের উপাদান। রক্ত থাকলে একে হেমাচুরিয়া এবং হিমোগ্লোবিন থাকলে একে হিমোগ্লোবিনোরিয়া বলে। আঘাতজনিত কারণে বা কিডনি, মূত্রাশয়, মূত্রনালিতে ইনফেকশন, পাথর কিংবা ক্যান্সার হলে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এজিএন বা গ্লুমেরুলোনেফ্রাইটিস কারণে প্রস্রাব লালচে হয়।


রোগ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শরীরে অন্য কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, হাত-পায়ে পানি আসা ইত্যাদি লক্ষণ আছে কি না দেখতে হবে। কিন্তু খাবার, পানি বা কোনো ওষুধ গ্রহণ ব্যতিরেকেই যদি প্রস্রাবের বর্ণ পরিবর্তন হয় এবং উপরের লক্ষণ দেখা যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


ডা. জিয়াউল হক
বিএসএমএমইউ, ঢাকা

স্মৃতিশক্তি উন্নয়নের কয়েকটি টিপস

স্মৃতিশক্তি তৈরি হয় এক জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যাতে জড়িত থাকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ও বিভিন্ন যোগাযোগ-প্রক্রিয়া। স্মৃতিশক্তি সাধারণত দুই ধরনের—



১) স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি ও
২) দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি।


১. স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি: যখন মস্তিষ্ক তথ্য ধরে রাখে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থাৎ কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য, তাকে স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বলে।


২. দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি: মস্তিষ্ক যখন উদ্যমের মাধ্যমে ক্রিয়া করে, হতে পারে সেটি সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে এবং যা নিজের কাছে খুবই অর্থবহ, সেগুলোই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তির রূপ নেয়।


স্মৃতিশক্তি উন্নয়নের করণীয় টিপস তুলে ধরা হলো-


মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুন: মাংসপেশির শক্তির মতো স্মৃতিশক্তিও ‘ব্যবহার করুন অথবা হারান’-এ নীতিতে চলে। আপনি যত মস্তিষ্কের ব্যবহার করবেন, আপনার স্মৃতিশক্তিও তত ধারালো হবে। ‘নিউরোবিক’ ব্যায়াম যেমন—চোখ বন্ধ করে গোসল করা বা ড্রেসআপ করা, নতুন খেলা শেখা, খবরের কাগজে নতুন নতুন পাজল বা ক্রসওয়ার্ড চর্চা করা, সম্ভব হলে প্রতিদিনই।


মনোযোগ দিন: আপনার স্মৃতিতে ধরে রাখতে হলে বিষয়টি মস্তিষ্কে লেখা হতে হবে আর যদি যথেষ্ট মনোযোগ না দেন, মস্তিষ্কে লেখার কাজটি হবে না। মস্তিষ্কের যথাযথ স্থানে একটি তথ্যেও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় আট সেকেন্ড সময় লাগে। তাই বহু কর্ম একসঙ্গে করতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হয়, এটি পরিহার করতে হবে।


আপনার শেখার ধরন বুঝুন এবং সেভাবে শিখুন: অধিকাংশ মানুষ দেখে শেখে, তারা উত্তমভাবে শেখে পড়ে পড়ে অথবা যা দেখার তা দেখে দেখে; কিন্তু কেউ কেউ আছে, তারা ভালো শেখে শুনে শুনে, যদি তারা ক্লাসের লেকচার অডিও বা ভিডিও রেকর্ড করে বারবার শোনে বা দেখে, তাহলে ভালো মনে রাখতে পারে।


যত বেশি সেন্স ব্যবহার করা যায় ব্যবহার করুন: আপনি দেখে দেখে শেখেন ভালো, শব্দ করে পড়ুন, তাতে আপনার আরও একটি সেন্স শেখার কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। এ ছাড়া শব্দ করে পড়াটা যদি ছন্দ হয়, তাহলে আরও ভালো। প্রতিটি তথ্য তার রং, আকার, গঠন ও গন্ধ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। পড়ার পর হাতে লিখলে তা স্মৃতিশক্তিতে গভীরভাবে প্রোথিত হয়। নতুন তথ্যকে আপনার পরিচিত কিছুর সঙ্গে তুলনা করুন।


তথ্যকে সংগঠিত করুন: বিষয়গুলো লিখুন, জটিল বিষয়গুলোর নোট নিন এবং পরে ক্যাটাগরি অনুযায়ীপুনর্বিন্যাস করুন।


চেষ্টা করুন এবং ব্যাখ্যা বের করুন: অধিকতর জটিল বিষয়গুলোর মৌলিক ধারণার ওপর জোর দিন, বিচ্ছিন্নভাবে মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না। জটিল বিষয়টি অন্যকে নিজের ভাষায় বোঝানোর ক্ষমতা অর্জন করুন। বারবার তথ্যের রিহার্সেল করুন এবং অতিরিক্ত শিখুন, যেদিন বিষয়টি শিখলেন, সেটি আবার ঝালাই করুন এবং মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে আবার ঝালাই করুন।


জমিয়ে না রেখে নিয়মিত পড়াশোনা করুন: গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ছাত্র নিয়মিত পড়াশোনা করে, তারা ভালো মনে রাখতে পারে।


প্রাত্যহিক পড়ার রুটিনে পরিবর্তন আনুন: মাঝেমধ্যে প্রাত্যহিক রুটিন পরিবর্তন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া রাতে পড়াশোনা করে পরদিন সকালে বিষয়টি রিভিউ করুন।


স্মৃতিশক্তি-সহায়ক পদ্ধতি অবলম্বন করুন: এ পদ্ধতিতে কোনো বস্তু মনে রাখার জন্য একটি সূত্র (ক্লু) হিসেবে কাজ করে। যেমন—ছবি, বাক্য বা শব্দ। ছড়া বা গানের আকারেও কোনো বিষয়বস্তু মনে রাখা যায়। কৌতুকের উদ্রেক করে (জোকস) এমন সব বিষয়ের মাধ্যমেও কঠিন বিষয়বস্তু মনে রাখা যেতে পারে।


স্বাস্থ্যবান্ধব অভ্যাসগুলো লালন করুন


ক) নিয়মিত শরীরচর্চা করুন: ব্যায়াম মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ায়, বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। যেগুলো স্মৃতিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


খ) ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন: কর্টিসল (একটি স্ট্রেস হরমোন) মস্তিষ্কের হিপপোক্যাম্পাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যদি স্ট্রেস দীর্ঘস্থায়ী হয়। স্ট্রেস মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।


গ) ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন: স্মৃতিশক্তি সংহত করতে ঘুম অত্যাবশ্যক। ঘুমের সমস্যা যেমন—‘ইনসোমনিয়া’ আপনাকে ক্লান্ত রাখবে এবং দিনের বেলায় আপনার মনঃসংযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।


ঘ) ধূমপান থেকে বিরত থাকুন: ধূমপানে মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়ে স্মৃতিহারা হতে পারেন এবং ধমনিকে সরু করে মস্তিষ্কের অক্সিজেন-প্রবাহ কমিয়ে দিয়ে স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দিতে পারে।


(৫) পুষ্টি ও স্মৃতিশক্তি: ফল, শাকসবজি, আবরণীসমেত দানাজাতীয় শস্য ও স্বাস্থ্যবান্ধব স্নেহজাতীয় (শস্যদানার তেল, মাছের তেল) খাদ্যে অনেক স্বাস্থ্য উপকারী গুণ আছে। পাশাপাশি এগুলো স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন ঘটায়। নিচে কিছু স্মৃতিশক্তি-সহায়ক খাদ্য-উপাদান দেওয়া হলো—ভিটামিন বি-৬, বি-১২ এবং ফলিক এসিড আছে পালংশাক ও গাঢ় সবুজ শাক, ব্রকলি, অ্যাসপারাগাস, স্ট্রবেরি, বাঙ্গি, তরমুজ, শিমের কালো বিচি এবং অন্যান্য ডালজাতীয় শস্যদানা, টকজাতীয় ফল ও সয়াবিনে।


অ্যান্টি অক্সিড্যান্টসমূহ আছে জাম, মিষ্টিআলু, লাল টমেটো, পালংশাক, ব্রকলি, সবুজ চা, বাদাম ও বিচি, টকজাতীয় ফল এবং কলিজায়। তাই বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি ও ফল খান এবং সঙ্গে উদ্ভিদজাত তেল দিয়ে তরকারি রান্না করে সেটা খান। প্রাণিজ তেল আপনার ধমনি সরু ও বন্ধ করে দিতে পারে, এগুলো পরিহার করলে তবেই মস্তিষ্ক আপনাকে ধন্যবাদ দেবে।


মো. ইফতেখার হাসান খান
ফ্যামিলি মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

জ্বরকে জানুন, সতর্ক হোন

জ্বর আসলে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি বহিঃপ্রকাশ। জ্বর কোনো রোগ নয়। তাই জ্বরে খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু এটি যাতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। জ্বরের কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো-



রোগ নির্ণয়


জ্বরের রোগীর ক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই রোগী বা তার ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে শুনেই জ্বরের কারণ বোঝা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর নিজের বিবৃতি বা তার সঙ্গে অনেক সময় ধরে আছেন এমন কারও বিবৃতি প্রয়োজন হবে। জ্বরের মেয়াদকাল, তাপমাত্রার উঠতি-পড়তি ও ব্যবধান, পরিবারের বা একই বাসা বা কর্মক্ষেত্রে আর কারও জ্বরের ঘটনা ঘটেছে কি-না, সাম্প্রতিক ভ্রমণ, বিশেষ খাদ্যগ্রহণ, কাঁচা বা আধা সেদ্ধ, পোষা বা বন্যপ্রাণী সংস্রব, পশুর বা পোকামাকড়ের কামড় ও কোন এলাকায় বসবাস করছে তা জানা প্রয়োজন। এর সঙ্গে রোগীর শারীরিক পরীক্ষাও জরুরি।


এরপরও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে রক্ত, মূত্র, মল ও এক্সরে অগ্রাধিকার পাবে। তবে কোন সময় কোন পরীক্ষাটি করা হবে তা চিকিত্সকই স্থির করবেন।


চিকিত্সা


অধিকাংশ জ্বরই এমনি নির্দিষ্ট সময় আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। প্রথমেই ভাইরাসঘটিত জ্বর। এক্ষেত্রে শুরু দেহের তাপমাত্রা কমানোর ওষুধ প্যারাসিটামল জাতীয় ও সহায়ক ব্যবস্থাপনা করতে হবে তবে জ্বরের ধরন ও মাত্রা দেখে চিকিত্সক সিদ্ধান্ত নেবেন কার জন্য কী করতে হবে। এজন্য জ্বরকে অবহেলা না করে সত্বর চিকিত্সকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। আর শিশুদের জ্বর হলে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। নিম্নলিখিত উপসর্গ/লক্ষণগুলো জ্বরাক্রান্ত শিশুদের মাঝে দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে।


১। হঠাত্ করে শিশুর আচরণ পরিবর্তিত হলে ২। খুব বেশি বমি হলে বা পাতলা পায়খানা হলে ৩। অনবরত উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে থাকলে ৪। প্রচণ্ড মাথাব্যথার কথা বললে ৫। পাকস্থলীর ব্যথার কথা বললে ৬। অযথা বিরক্ত হলে ৭। ত্বকে কোনো দানা বা গুটি দেখা দিলে ৮। মুখ শুকিয়ে এলে ৯। ক্ষুধা না থাকার কথা বললে ১০। গলায় ব্যথা থাকলে ১১। গলার ভেতর খড়খড় শব্দ হলে ১২। কানে ব্যথা থাকলে ১৩। খিঁচুনি হলে ১৪। ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে ১৫। বুকের ভেতর শন শন শব্দ হলে।


জ্বর কমানোর জন্য স্পঞ্জিং


অনেক ক্ষেত্রেই পুরো শরীর ভেজা নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে একটানা কয়েকবার আলতো করে মুছে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় এবং খুব ভালো বোধ হয় রোগীর। এ কাজে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল ব্যবহার করতে হবে। খুব ঠাণ্ডা জল ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। আর শিশুদের ক্ষেত্রে জলে শিশুটিকে বসিয়ে স্পঞ্জ করাই সুবিধাজনক। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর থাকার ঘরের তাপমাত্রা ২৩.৯ ডিগ্রি সে. থাকাই সবচেয়ে ভালো। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে জ্বরে আক্রান্তদের শুধু মাথায় জল ঢালার অভ্যাস লক্ষ্য করা যায়। এটি মোটেও উপকারী নয়। এতে জ্বর তো নামবেই না বরং ঠাণ্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে।


জটিলতা


জ্বর খুব বেড়ে গেলে এর জন্য বিপাকীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বরের কারণে দেহের ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় এবং এর জন্য রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণও বেড়ে যেতে পারে (ডায়াবেটিসের রোগীদের)। অকস্মাত্ তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাও শিশুদের খিঁচুনি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাসে প্রচণ্ড জ্বর হলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।


জ্বর সম্ভবত প্রাচীনতম ও সর্বজনগ্রাহ্য অসুখের উপসর্গ। জ্বর দেহের সংক্রমণ প্রতিরোধের বা স্বাভাবিক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। জ্বরের চিকিত্সার ইতিহাসও সুপ্রাচীন। এসপিরিন জাতীয় ওষুধ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য খুব ভালো। তবে শিশুদের জন্য এসপিরিন দেয়া যাবে না। তাদের জন্য প্যারাসিটামলই ভালো।


ডা. শাহজাদা সেলিম

স্তন ক্যান্সার শনাক্তের উপায়গুলো

স্তন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি। তাই একাধিক কারণকে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয়। যেমন: জেনেটিক ফ্যাক্টরের কারণে মা-খালাদের ক্যান্সার থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।



অবিবাহিত বা সন্তানহীনা মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।
যারা সন্তানকে কখনও স্তন্য পান করাননি, তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।
৩০ বছর পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন, তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলার থেকে অনেক বেশি।
বয়স যত বাড়ে, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।
অল্প সময়ে বাচ্চা নিলে, দেরিতে মাসিক শুরু হলে, তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হলে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়ে যায়।

একাধারে অনেক দিন জন্মনিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উপরোক্ত কারণগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়।


কী করে স্তন ক্যান্সার বুঝবেন


সাধারণত ৩০ বছরের আগে এই রোগ কম হয়।
বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
বুকে চাকা সেই সঙ্গে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।
বুকে চাকা এবং বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে।
নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মতো ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।
অনেক সময় বুকে ব্যথা নিয়েও আসতে পারে।
এগুলো ছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে; যেমন : হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ইত্যাদি।


ডা. একেএম শাহিদুর রহমান
মেডিকেল অফিসার, বিএসএমএমইউ

দেশে এলো ব্রেস্ট ক্যান্সারে কার্যকর ওষুধ ‘টাইকার্ব’

ক্যান্সার চিকিত্সায় ব্যাপক উন্নতির অংশ হিসেবে যেসব ওষুধ বাজারে এসেছে তাদের অন্যতম একটি হচ্ছে টাইকার্ব। এখন থেকে বাংলাদেশেও এই ওষুধটি পাওয়া যাবে। এবং এর ফলে বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারের চিকিত্সায় মুখে গ্রহণ করার মতো ওষুধটিও পাওয়া যাবে। গত ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার একটি হোটেলে ওষুধটির বাংলাদেশে বাজারজাতকরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করে ওষুধটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে)।



খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এমএ হাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সিম্পেজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এমিরেটাস ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবিএম করিম এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সার্জন অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিদেশি এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা তাদের বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। সিম্পোজিয়ামের প্রধান অতিথি অধ্যাপক এবিএম করিম স্তন ক্যান্সার চিকিত্সায় টাইকার্ব সুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইআরবি২ পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সারে ঝুঁকি বেশি। এ ধরনের ব্রেস্ট ক্যান্সার দ্রুত বিস্তার লাভ করে। প্রচলিত ট্র্যাসটুজুম্যাবের চিকিত্সায় প্রায় ৫০ ভাগ রোগীর ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যেত। বাকি ৫০ ভাগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিত্সা শুরু করতে হতো। টাইকার্ব এই প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে পেরেছে বলে মত প্রকাশ করেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. পারভীন বানু। প্রচলিত ওষুধ ট্র্যাসটুজুম্যাব গ্রহণের পরও চলতে পারে টাইকার্ব, তাতে ফলাফলও বেশ আশানুরূপ। মারাত্মক ধরনের ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিত্সায় টাইকার্ব রোগের গতিকে যেমন স্থবির করে দিতে পারে, তেমনি বাড়িয়ে দিতে পারে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে এই পৃথিবীতে কাটানোর জন্য আরও কিছু সুন্দর সময়। বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের একটি ওষুধ স্তন ক্যান্সারের চিকিত্সাকে সহজতর করবে।


উল্লেখ্য টাইকার্ব, যার জেনেরিক বা বংশগত নাম লাপাটিনিব। টাইকার্ব ইআরবিবি১ (ইজিএফআর) এবং ইআরবিবি২ (এইচইআর২) এই দুই ধরনের ক্যান্সারকেই অবদমিত করতে সক্ষম।