الأحد، 26 ديسمبر 2010

মানসিক অসুস্থতা প্রতিরোধে প্রয়োজন অব্যাহত ও সমন্বিত সেবা

শরীরের সঙ্গে মনের সম্পর্ক সুনিবিড়। শরীরকে সুস্থ রাখতে মনের প্রফুল্লতা বজায় রাখা যেমন জরুরি তেমনি মনকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখার জন্য স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থার এক মুখপাত্র রিচার্ড কলউইল বলেন, হার্টের মতো ব্রেন বা মস্তিষ্কও একটি ফিজিক্যাল অরগ্যান বা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। ব্যায়াম যত স্বল্প পরিসরে করাই হোক না কেন তা যেমন শরীরের জন্য উপকারী, একইভাবে তা ব্রেনের ওপরও কার্যকর ভূমিকা রাখে। ব্রেন বা মস্তিষ্ক যেহেতু শরীর ও মনের কেন্দ্রবিন্দু, তাই এ দু’য়ের সুস্থতাও নির্ভর করে কেন্দ্রের সুস্থতার উপর। ১০ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। বরাবরের মত এবারও বাংলাদেশে পালিত হল মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “ Mental Health and Chronic Physical Illness: The Need for Continued and Integrated Care” অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য ও দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতাঃ প্রয়োজন অব্যাহত ও সমন্বিত সেবা।



মানসিক রোগ এমনই একটি রোগ যে রোগে জীবনের কোন না কোন সময়ে আমরা যে কেউ আক্রান্ত হতে পারি। তাই বিভিন্ন মানসিক রোগ সর্ম্পকে আমদের প্রত্যেকেরই ধারণা ও সচেতন থাকা উচিত।


মানসিক রোগ মূলত দুই প্রকার হয়ে থাকে,(১) নিউরোসিস এবং (২) সাইকোসিস।


নিউরোসিস রোগটি মৃদু ধরনের মানসিক রোগ যেখানে আক্রান্ত রোগীর আচার-আচরণ বা ব্যবহারে তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। এই জাতীয় রোগে রোগী নিজে ভূগতে থাকে ও কষ্ট পেতে থাকে এবং মানসিক রোগ সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে অনেক রোগীই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান না। আর সাইকোসিস হচ্ছে জটিল এক ধরনের মানসিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীর আচার-আচরণ বা ব্যবহারে ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কুসংস্কার এবং মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে এক্ষেত্রেও অধিকাংশ রোগীর অভিভাবক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান না। এরা একে জ্বিনের আছর, পরী ধরা, ভূতে ধরা,খারাপ বাতাস লাগা প্রভৃতি মনে করে পানি পড়া, তাবিজ-কবজ, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদির জন্য পীর, ফকির, দরবেশের কাছে ছুঁটে যান। এতে করে রোগীর তো কোন উপকার হয়ই না বরং বিভিন্ন অপচিকিৎসায় রোগীর অবস্থা আরো জটিল আকার ধারণ করে।


বিভিন্ন নিউরোসিস মানসিক রোগের মধ্যে রয়েছেঃ


টেনশন বা উদ্বেগ আধিক্য রোগঃ মানুষ মাত্রই উদ্বেগে থাকে। কিন্তু উদ্বেগের স্বাভাবিক মাত্রা যখন অতিক্রম করে তখনই এ রোগ হয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগী একটা অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করে এবং কাজে কর্মে মন বসাতে পারে না।


অবসেশন বা শুচিবায়ু রোগঃ এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি একই কাজ বার বার করে। যেমন-হাত ধোয়া, ঘরের তালা লাগানো ঠিক মতো হলো কিনা সেটা বার বার চেক করা, একটা চিন্তা মাথায় ঢুকলে সে চিন্তাই বার বার করা। বার বার একই কাজ করতে রোগী নিজেকে বাধা দিতে চায়। কিন্তু সক্ষম হতে পারে না।


হিস্টিরিয়াঃ সাধারণত মহিলারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। দুশ্চিন্তাই এ রোগের মূল কারণ। রোগী যখন তার দুশ্চিন্তার কথা মুখে প্রকাশ করতে পারে না তখন শারীরিক বা মানসিক বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে এ রোগ প্রকাশ পায়।


ফোবিয়া বা অহেতুক ভীতি রোগঃ অহেতুক ভীতি বা ফোবিয়া হল যেখানে যতটুকু ভয় পাওয়ার প্রয়োজন সেটা অপেক্ষা বেশি ভীত হয়ে পড়া। উদাহরণ স্বরুপ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষ করে কেউ মারা গেছে শুনলে, বেতার, টিভিতে না পত্রিকায় খুন জখমের কথা শুনলে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়ে।

বিভিন্ন সাইকোসিস রোগের মধ্যে রয়েছে।


ডিপ্রেসন বা বিষণ্ণতা রোগঃ বিষণ্ণতাবোধ এবং বিষণ্ণতা রোগ দুটি আলাদা জিনিস, সত্যিকার বিষণ্ণতা রোগে মন খারাপ ভাব দীর্ঘমেয়াদী ভাবে থাকবে যা রোগী ইচ্ছা শক্তি দিয়েও দূর করতে পারে না এবং তার কাজ-কর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। যেমন- দীর্ঘমেয়াদী অশান্তি বোধ, আনন্দদায়ক কাজে আনন্দ না পাওয়া, আত্নহত্যার চিন্তা করা প্রভৃতি।


সিজোফ্রেনিয়াঃ সিজোফ্রেনিয়া মানসিক ব্যাধিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জটিল ব্যাধি। এ রোগের বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে পরিবেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা অসংলগ্ন এলোমেলো ও হেঁয়ালি পূর্ণ কথাবার্তা বলে, কানে গায়েবী আওয়াজ শোনা ইত্যাদি।


ম্যানিয়াঃ এক্ষেত্রে রোগী তার নিজের অবস্থান বুঝতে পারেনা। নিজেকে অতিরিক্ত সুখী, ধনী কিংবা ক্ষমতাধর ব্যক্তি ভাবে। খুব আশাবাদী হয়ে থাকে, বাস্তবতা বিরোধী কাজ করে।


শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগঃ আমরা অনেকেই জানি না যে, শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগ হতে পারে। কিন্তু সত্য এই যে, শিশু জন্মের তিন বছর পর থেকে তারা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগের মধ্যে রয়েছে বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ, স্কুল পালানো, খাদ্যগত সমস্যা, ওটিসম (এটি ৩ বছরের পূর্বে দেখা দেয়) আচরণগত সমস্যা, চঞ্চলতা রোগ। অন্যান্য মানসিক রোগের মধ্যে আছে মাদকাশক্তি, মৃগীরোগ জনিত মানসিক রোগ, মানসিক প্রতিবন্ধী প্রভৃতি।


মানসিক রোগ এক নীরব ঘাতক ব্যাধি তাই এই রোগ সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত এবং সচেতন হওয়া উচিত। এজন্য দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্মূল্যায়ন করুন, দিন যাপনের সময় লক্ষ করুন কী কারণে মনে চাপ পড়ে। চাপযুক্ত পরিবেশে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলালে অনেক সময় বিপদকে ভয় পাবেন না, মন থাকবে শান্ত একে মোকাবিলার জন্য। এভাবে মনের চাপ থাকবে দখলে। মন থাকবে সুস্থ। আর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় অযথা উদ্বেগ না হয়ে চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ গ্রহন করুন এবং অব্যাহত ও সমন্বিত সেবা নিয়ে মানসিক অসুস্থতাকে মোকাবিলা করুন।

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق