الجمعة، 31 ديسمبر 2010

Exercise Myths ব্যায়াম সম্পর্কিত প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা

অনেকেই ব্যায়াম করেন

কিন্তু দেখেছি অনেকেই ব্যায়েমের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করেন
কারণ এই ভুল ধারণা গুলো সত্য হিসাবে প্রচলিত হবার কারণে তা ভুলই রয়ে গেছে
এর ফলে অনেকেই ব্যায়ামের সুফল পান্ না এবং ওজন ঠিক মত ওজন কমে না বা শরীরের মাসেল গুলো ঠিক মত সেপ হয় না
ফলে ফিটনেসও ঠিক মত অর্জন করা সম্ভব হয় না


তাই আপনাদের জন্য ব্যায়াম সম্পর্কিত কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা বা Exercise Myth দেয়া হলো:-
অধিক সময় ধরে ব্যায়াম করলে বেশি ক্যালরি বার্ন হবে, ফলে ওজন কমবে
সঠিক নিয়ম হলো আপনি কম সময়ে যত বেশি ক্যালরি বার্ন করার জন্য কষ্ট করবেন তত লাভ হবে, ক্যালরি বার্ন হবে তত বেশি
প্রতিদিন high intensity বা অনেক কষ্টকর ব্যায়াম না করলে কোনো লাভ হবে না
সঠিক হলো: আপনি যেদিন high intensity ব্যায়াম করবেন, তারপর দিন অবশ্যই low intensity বা কম পরিশ্রমের ব্যায়াম করবেন
অথবা শরীরকে বিশ্রাম দেবেন
তা না হলে আপনার শরীরে ব্যায়াম কাজ করবে না
ব্যায়ামর আগে স্ট্রেচিং করতেই হবে
সঠিক হচ্ছে : স্ট্রেচিং করবেন দৌড়ানোর আগে এবং ওয়ার্ম আপের পরে, প্রতিটি Weight training ব্যায়ামের পরে ইত্যাদি
Weight Training করলে মহিলাদের মাসেল হয়
এটি একটি খুবই প্রচলিত ভুল ধারণা
মহিলাদের কখনো মাসেল হয় না
কারণ: মহিলাদের testosterone হরমন থাকে না, যা মাসেল বানাতে সাহায্য করে
তাই বেশি weight নিলেও মহিলাদের মাসেল হয় না
যদি steroid injection নেয়া হয় তাহলে মাসেল হতে পারে
High intensity ব্যায়াম করলে মহিলাদের সমস্যা হয়
সবসময় High intensity ব্যায়াম করলে সমস্যা হতে পারে, সেটা সবার জন্যই প্রযোজ্য
তাই প্রতিদিন নয়, একদিন পর পর High intensity ব্যায়াম, যেমন: running, jogging, spinning ইত্যাদি করা যাবে, তাতে মহিলাদের কোনো সমস্যা হবে না
বরং তাতে ফিটনেস বাড়বে, ওজন তাড়াতাড়ি কমবে
ব্যায়াম করলে ওজন কমে না
সঠিক হলো ব্যায়াম করলে ক্যালরি বার্ন হয়, metabolism বাড়ে ফলে ব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করে
তবে ব্যায়ামের সাথে ব্যালান্স ডায়েট করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে
কম weight নিয়ে weight lifting করলে মাসেল ভালো টোন হবে
সঠিক হচ্ছে: বেশি weight নিলে মাসেল তাড়াতাড়ি টোন হবে
বেশি বেশি কার্ডিও ব্যায়াম ফ্যাট বার্ন করার জন্য দরকার
কার্ডিও ফ্যাট বার্ন করার জন্য দরকার বটে, তবে তা প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে, প্রয়োজনীয় মাসেল ও ফ্যাট ভাঙ্গতে শুরু করবে, ফলে হিতে বিপরীত হবে
শুধু মাত্র কার্ডিও ব্যায়ামই ওজন কমাতে যথেষ্ট, weight training বা স্ট্রেচিং ব্যায়ামের দরকার নেই
শুধু মাত্র কার্ডিও করলে কখনই আপনার ওজন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নাও আসতে পারে, আপনার মাসেল সেপ নাও হতে পারে, আপনাকে weight training ও স্ট্রেচিং করতেই হবে
ঘাম না হলে ব্যায়াম কার্যকরী হবে না
ব্যায়ামের ফলে ঘামের মাধ্যমে পানি বের হবার কারণে শরীর ঠান্ডা হতে সাহায্য করে মাত্র
ঘাম না হলেও অনেক ক্যালরি বার্ন হতে পারে
বয়স্ক মানুষেরা ব্যায়াম করলে কোনো লাভ নেই
যেকোনো বয়সের মানুষ ব্যায়াম শুরু করতে পারবেন
কারণ একমাত্র ব্যায়ামই আপনাকে দেবে সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা
কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন তা বয়স ও শারীরিক ফিটনেস ইত্যাদির উপর নির্ভর করে
ব্যায়ামের মাঝে পানি খাবার দরকার নেই
সঠিক হলো অবশ্যই ব্যায়াম করার মাঝে, আগে ও পরে পানি খেতে হবে, না হলে শরীর dehydrated হয়ে যাবে
দৌড়ালে হাটুতে সমস্যা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হয়
প্রতিদিন দৌড়ালে হাটুতে সমস্যা হতেই পারে, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন দৌড়ালে (যদি না কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে) তাহলে যে ফিটনেস বাড়ে, তা অবিশ্বাস্য
শুধু মাত্র abdomen এর ব্যায়াম করলেই পেট বা abdomen কমবে
সঠিক হচ্ছে –কার্ডিও এবং weight training দুটিই করতে হবে পেটের ব্যায়ামের পাশাপাশি
কিভাবে মেদ ভুঁড়ি বা পেট কমাবেন ?
যে কেউ Yoga করতে পারে, এবং সুফল পাবে, Yogaর কোনো সমস্যা নেই
Yogaর অনেক রকম বিভাগ আছে
সবার জন্য সব রকম Yoga নয়, বয়স, ফিটনেস অনুযায়ী ,সঠিক নিয়মে, ভালো instructor এর নির্দেশনায় Yoga করতে হবে
সবার জন্য সব ধরনের ব্যায়াম সমান
এক এক জনের শারীরিক অবস্থা এক এক রকম
তাই সব ব্যায়াম সবার শরীরে এক রকম কাজ নাও করতে পারে
কারো ক্ষেত্রে সময় কম বা বেশি লাগতে পারে, আবার genetic কারণে, body structure ও ডায়েট এর জন্য ও সময় এর হের ফের হতে পারে
একটি perfect workout routine এই সবসময় ব্যায়াম করা দরকার
সঠিক হচ্ছে: আমাদের শরীর ৪-৬ সপ্তাহে workout routine এ অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাই ৪ সপ্তাহ পর পর ব্যায়াম এর রুটিন বদলাতে হবে
সেটা অনেক ভাবেই হতে পারে
যেমন : নতুন ধরনের ব্যায়াম করা, ব্যায়ামের routine বদলানো, ব্যায়ামের ধরন বদলানো: যেমন : নরমাল floor aerobics বদলিয়ে dance aerobics/kickboxing করা ইত্যাদি
যেই মাসেলে সমস্যা সব চেয়ে বেশি শুধু সেই মাসেলের ব্যায়াম করলেই হবে বা গুরুত্ব দিতে হবে
সঠিক হচ্ছে: পুরা শরীরেই ফ্যাট জমে, যেই জায়গায় সমস্যা বেশি তার ব্যায়াম সবার শেষে করতে হবে
তার আগে অন্যান্য মাসেলেরও ব্যায়াম করতে হবে
ব্যায়াম শুধু মাত্র ওজন কমানোর জন্য করা দরকার এবং ব্যায়াম একটি বিলাসিতা
সঠিক হচ্ছে ব্যায়ামের অনেক উপকারিতা আছে
ওজন কমানো ছাড়াও ব্যায়াম সুস্থ্য থাকার জন্য, ফিটনেস এর জন্য, হার্ট, ফুসফুস ভালো রাখার জন্য , রক্তচাপ, Arthritis নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দরকার
ব্যায়ামের আরো উপকারিতা জানতে ক্লিক করুন
একটি কথা মনে রাখবেন –মানুষের শরীর যেভাবে তৈরী তা শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করার জন্যে, তাই ব্যায়াম না করলে অসুস্থ্য হতে বাধ্য
তাই ব্যায়াম বিলাসিতা নয়, এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, দৈনন্দিন জীবনের অংশ
আশা করি ব্যায়ামের জানা ভুল দিক গুলো আপনাদের কাজে লাগবে এবং আরো সঠিক ভাবে ব্যায়াম করতে সাহায্য করবে
একটি ব্যায়ামের রুটিনে কার্ডিও, strength, flexibility—এই তিন ধরনের ব্যায়াম থাকলেই সেটি হবে একটি আদর্শ ব্যায়ামের রুটিন
ব্যায়ামের কিছু সাধারণ নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা
ফিটনেস বাংলাদেশ ব্লগ পড়তে থাকুন আর সবাইকে পড়তে বলুন আর সবার উপকার করুন
আর অনেক অনেক দোয়া করুন ফিটনেস বাংলাদেশ এর জন্য, যেন নতুন বছর: ২০১১ সালে আপনাদের জন্য আরো অনেক নতুন ও কার্যকরী পোস্ট নিয়ে আসতে পারি

অলিভ ওয়েল হূদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক

হূদরোগ নিয়ে ভাবে না এমন মানুষ বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এ জন্য যারা শরীরের প্রতি সচেতন তারা নিয়মিত শরীর চর্চা, কম চর্বিযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়া, কিছু মেডিটেশন করেন। অনেক পরিবার আবার রদ্ধন প্রণালীতে কোলেস্টেরল মুক্ত তেল ব্যবহারে গুরুত্ব দেন। তবে হূদরোগের ভয়ে যারা খাবারের তেল নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য বিজ্ঞানীরা অলিভ ওয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন ২ চামচ করে অলিভ ওয়েল আহার করলে হূদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

বিয়ের আগে দাঁত, মুখ পরীক্ষা

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন যে বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যেমন জরুরী তেমনি সেই সাথে মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করাটাও জরুরী। কারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যই হচ্ছে দু'জন যাতে নিরাপদে জীবন নির্বাহ করতে পারেন সেই সাথে একটি সুন্দর ফুটফুটে ভবিষ্যৎ শিশুর জন্ম দিতে পারেন। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস এর জন্য রক্তের শর্করার পরিমাণ সেই সাথে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, হেপাটাইটিস রোগের মার্কার হিসেবে ঐএংঅম এবং অহঃর ঐপা পরীক্ষা ইত্যাদি। সেই সাথে হূদরোগের জন্য ইসিজি ও ফুসফুসের কোন সমস্যা যেমন শ্বাসকষ্টজনিত কোন রোগ আছে কিনা দেখা প্রয়োজন। প্রতিবছর একবার আমাদের শরীর পরীক্ষার সাথে বছরে দুইবার মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। মুখ ও দাঁতের পরীক্ষা দুই বার প্রয়োজন কেন? কারণ মুখের ভিতরে এমন কিছু রোগ আছে যা দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং সেই রোগের কারণে দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।



একটি উদাহরণ দেয়া যাক, সাধারণত: মেয়েদের বিয়ের পর তারা গর্ভবতী হয় এবং এই অবস্থায় মুখের ভিতরে মাড়িতে প্রদাহ হয়, বিজ্ঞানীরা যাকে বলেন চৎবমহধহপু মরহমরারঃরং এই অবস্থায় মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে, দাঁতের সাথে মাড়ির অবস্থান নষ্ট হয়ে যায় এবং তা গর্ভস্থ শিশুকে আক্রান্ত করে, পরবর্তীতে যে শিশুটি জন্ম লাভ করে তার ওজন কম হতে পরে ও নির্দ্ধারিত সময়ের আগে বা দেরিতে জন্ম নিতে পারে, ফলে জটিলতা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিটি মায়ের প্রয়োজন বিয়ের আগেই মাড়ির এই ধরনের প্রদাহের চিকিৎসা করা যেমন ডেন্টাল স্কেলিং ও প্রয়োজন বোধে শৈল্য চিকিৎসা (এরহমরাবপঃড়সু) । গর্ভাবস্তায় স্কেলিং এর জন্য পেনিসিলিন, এমস্কেসিলিন এবং ফ্লিন্ডমাইসিলিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক দেয়া প্রয়োজন। তবে কখনোই টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না, কারণ তাতে ভবিষ্যৎ শিশুর দুধ দাঁত বা স্থায়ী দাঁতের রঙ স্বাভাবিক না হয়ে হলদেটে অথবা বিবর্ণ হতে পারে।


সৌন্দয্যচচ্র্চা একজন ছেলে মা মেয়ে তার বিয়ের আগে মুখ ও দাঁতের অন্যান্য অসুস্থতার সাথে তার সৌন্দর্য চচ্র্চার ব্যাপারে ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যেমন দাঁতের ফাঁক ও উচ্চু অবস্থান, দাঁতগুলো বিবর্ণ বা স্বাভাবিক রঙ না হয়ে হলদেটে ইত্যাদি।


চিকিৎসা: দুধ দাঁত ফাঁক থাকলে (ডায়াবেটিস না থাকলে) তা আজকাল অতি সুন্দর ফিলিং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক সুন্দর করা যায়। লাইট কিউর ফিলিং আবার একটি/ দুটি বা অনেকগুলো উচু দাঁতকে ও অর্থডেন্টিক বা ক্রাউন ব্রিজ চিকিৎসায় স্বাভাবিক সুন্দর করা যায়। আজকাল বিবর্ণ বা হলদেটে/ কালো দাঁতকে ও বিস্নচিং এর মাধ্যমে সুন্দর ঝকঝকে মুখের মতো করা যায়।


অতএব সমস্ত বিষয় নিয়ে যদি কেউ বিয়ের আগে ভাবেন, অথবা এসব কারণে বিয়েতে সম্মতি না পান তবে অবশ্যই ডেন্টিস্ট দেখিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সুন্দর হাসি নিয়ে বিয়েতে পিড়িতে বসা আজকাল কোনো সমস্যাই নয়।


অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টিষ্ট্রি, বারডেম হাসপাতাল
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ।

ডায়াবেটিস ও চোখ পরিচর্যা

ডায়াবেটিস রোগটি এখন বিশ্বব্যাপী। আমেরিকার মত শিল্পোন্নত দেশে যেখানে ২ কোটি ৩০ লক্ষ লোকের রয়েছে ডায়াবেটিস আর এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬০ লক্ষ লোক জানেন-ই-না যে তাদের রয়েছে ডায়াবেটিস।



আমাদের দেশে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের অনুমান দেশে আছে ৬০ লক্ষ ডায়াবেটিস রোগী। তবে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মনে করেন দেশের ২৫ শতাংশ লোকের মধ্যে পর্যবেক্ষণ এটি। এবং বেশি আওতায় আসেনি। সুতরাং ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা যে আরো বেশি তা বলার আপেক্ষা রাখেনা।


চিহ্নিত না হলে যে সমস্যা হয়, তা হলো ডায়াবেটিস থেকে দৃষ্টিশক্তি খর্ব হয়ে যাওয়া, টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি বড় জটিলতা-অনেক সময় এ থেকে হতে পারে অন্ধত্ব। এজন্য ডায়াবেটিস পরিচর্যাটিমের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেল "অপটোমেট্রিস্ট।" ডায়াবেটিস থাকলে বছরে অন্তত: একবার চোখ পরীক্ষা করা। যাদের ইতিমধ্যে চোখে সমস্যা বারোটিনোপ্যাথি ঘটেছে এদেরকে আরও পুন:পুন: পরীক্ষা করানো উচিত।


'ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি'- ডায়াবেটিস জনিত চোখের রোগ ইদানীং ২০-৭৪ বছর বয়সী লোকদের মধ্যে অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ডায়াবেটিস হলে দৃষ্টির আরও যে যে সমস্যা হয় তা হলো; দৃষ্টিশক্তিতে পরিবর্তন, গস্নুকোমা, চোখে ছানি পড়া। চোখকে বিষ্কারিত করে চোখকে পরীক্ষা করেন অপটোমেট্রিস্ট- দেখেন চোখের ভেতরটা, পরীক্ষা করেন চোখের রক্তনালী সরাসরি, লক্ষ্য করেন রেটিনোপ্যাথির লক্ষণ রয়েছে কিনা।


দীর্ঘ দিন রক্তের সুগার উঁচুমানে থাকলে চোখের ভেতরে নাজুক রক্তনালীগুলো ক্ষতিহয়, এগুলো বিদীর্ণ হয়ে যায়, রক্তক্ষরণ হয়, রুদ্ধ হয়ে যায়।


উপসর্গ:
০ দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়
০ মাঝে মাঝে দ্বিদৃষ্টি হয়।
০ রাত্রে দেখার সমস্যা
০ এক বা দু চোখের সামনে আলোর বিন্দুর ঝলক বা উড়ন্ত/ ভাসমান বস্তু।


ডায়াবেটিস ও এর জটিলতা চোখের নানা অংশের উপর প্রভাব ফেলে, অদূরদৃষ্টি, দূরদৃষ্টিশক্তি এবং অকাল প্রেসবায়োপিয়া। দৃষ্টিশক্তি হয় ব্যহত। চশমা প্রয়োজন হয়।


চোখের ব্যাপক পরীক্ষার সময় অপটোমেট্রিস্ট নানা পরীক্ষা করেন, চোখকে রিষ্কারিত করে এবং আলো ও লেন্স দিয়ে রেটিনাকে বহুগুণ বিবর্তিত করে পরীক্ষা করা, ডায়াবেটসের লক্ষণ চিহ্নিত করা। আগাম সনাক্ত করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।


ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিক সূচনাকালীন পর্যায়ে লেজার থেরাপি কার্যকর হতে পারে। আরও অগ্রসর হলে, প্রয়োজন হবে সার্জারি।


দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা বোধ হলেই চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে। অপটোমেট্রিস্ট। সে সঙ্গে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তদারকিও বজায় রাখা। সে সঙ্গে সাহায্য নিতে হবে ব্যায়াম ও খাদ্য ও ওষুধের পরামর্শের জন্য ডাক্তারদের। তাহলে জীবন ভর সুদৃষ্টি শক্তি ও সুস্বাস্থ্য অর্জন করা যাবে।


অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা।

বয়স ধরে রাখতে-

আজ কাল অনেক রোগী পাই যারা চির তরুণ থাকতে চান। ধরে রাখতে চান বয়সের গতি। কিন্তু সৃষ্টির অমোঘ বিধান লংঘন করার কোন সুযোগ নেই। বিজ্ঞানও এখানে অসহায়। তবে বয়সের গতি নামিয়ে দিতে না পারলেও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে কর্মঠ ও অ্যাকটিভ রাখার নানা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে। তাই কিভাবে শরীরকে সুস্থ, সবল ও অ্যাকটিভ রাখবেন তাই নিয়ে আজকের এই লেখা।



সুস্থ সবল এ্যাকটিভ জীবনের জন্য করণীয় :-
এক:অন্যতম দরকার হচ্ছে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃংখলা। তরুণ বয়স থেকেই এই শৃংখলার চর্চা করতে হবে এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। কোন ভাবেই নিজের ওপর অত্যাচার করা যাবেনা। পাশাপাশি ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার পরিহার করতে হবে। বিনা প্রয়োজনে কোন ধরনের অপচিকিৎসা নেয়া যাবেনা।


দুই: যথাসম্ভব চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে অথবা চর্বি জাতীয় খাবার কম আহার করতে হবে। পাশাপাশি সুষম খাবার যেমন; প্রচুর শাক সবজি, প্রয়োজন মত মাছ-মাংস, ডিম ও প্রচুর ফল খেতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন ৮-১০ গস্নাস বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি কোন ধরণের ফাস্টফুড, তেলে ভাজা খাবার ও সফট ড্রিংস খাওয়া চলবেনা।


তিন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন না হলেও অন্তত: সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়াম যেমন, হাটাচলা, জাগিং, সুইমিং করতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্যায়াম শরীরের রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক সবলতার জন্য রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন।


চার: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মানসিক চাপ, হতাশা থেকে শারীরিক সামর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানসিক চাপ কমানোর জন্য ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে যে কারণে মানসিক চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে তা নিরসনে সচেষ্ট হতে হবে। নিজের যা আছে তাই নিয়েই সুখী থাকতে চেষ্টা করুন। বিবাহিত হলে দাম্পত্য জীবন আনন্দময় করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।


পাঁচ: ত্বক সুন্দর রাখার চেষ্টা করুন। কারণ সর্ব প্রথম বয়সের ছাপ ত্বকে পড়ে। তাই ত্বক সুন্দর ও মসৃন রাখতে ত্বকের পরিচর্যা করুন। ভালো ক্লিনজার ব্যবহার করুন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এবং রোদে যাবার আগে যে কোন হালকা সানবস্নক ব্যবহার করুন। ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর সবজি ফল ও পানি পান করুন।


ছয়: প্রতিদিন নিদিষ্ট সময়ে ঘুমাতে চেষ্টা করুন এবং প্রতু্যষে ঘুম থেকে উঠে যার যার ধর্মমতে প্রার্থনা করুন। ইয়োগা, মেডিটেশনও করতে পারেন। অন্যের কোন অনিষ্ট যাতে আপনার কর্ম-আচার-আচরণে না ঘটে তার প্রতি সতর্ক থাকবেন। পরিবারের সদস্যদেরও সেই নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষায় উজ্জীবীত করুন।


সাত: ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ওজন, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে চিকিৎসা করুন এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। লবণ কম খান।


আট:ধূমপান একেবারেই পরিহার করুন। ধূমপান শারীরিক সামর্থ নষ্ট করে, ত্বক ও মনের তারুণ্য কমিয়ে দেয় এবং হূদরোগসহ নানা শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। তাই ধূমপান একেবারেই নয়। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করুন।


নয়: সব সময় পজিটিভ চিন্তা করুন এবং যে কোন সমস্যা মনের জোর দিয়ে জয় করার চেষ্টা করুন। এমনকি দাম্পত্য সমস্যাও মানসিক শক্তি দিয়ে জয় করা যায়, ওষুধের প্রয়োজন নেই।


দশ: নিজের অনেক কঠিন সমস্যা নিজের মধ্যে না রেখে আপনজন বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন। প্রয়োজনে উপযুক্ত কাউন্সিলিং-এর জন্য সংশিস্নষ্ট কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


হডা: মোড়ল নজরুল ইসলাম
চুলপড়া, চর্মরোগ ও এলার্জি এবং
যৌন সমস্যা বিশেষজ্ঞ
কন্স্যালট্যান্ট ডার্মাটোলজিস্ট
ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা

সিস্নম থাকতে টমেটো

ছিপছিপে থাকতে রোজ টমেটো খাওয়া ভালো। টমেটো ভিটামিন-সি ভরপুর। হূৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। টমেটো বা টমেটোর জুস খেলে কয়েক সপ্তাহের ভেতর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। হালে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আর একটি তথ্য। তথ্যটি হলো, সম্প্রতি ডেইলি মেল পত্রিকার এক প্রতিবেদনে, টমেটো খেলে বাড়তি ওজন লাঘব হয় বলে দাবি করা হয়েছে। কারণ টমেটোর এমন কিছু যৌগ আছে যেগুলি খিদে বাড়ানোর হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন ঘটায়। খাই খাই ভাবকে দূরে রাখে। ফলে বাড়তি খাওয়ার ইচ্ছা কমে। যদিও এর পেছনে কোন উপাদান সক্রিয় জানা যায় নি। অনুমান লাইকোশেন, যার জন্য টমোটো লাল দেখায় সেই উপাদানের এখানে ভূমিকা আছে।

হার্টের বাইপাস সার্জারি

বর্তমান সময়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মৃতু্যর কারণ সমূহের মধ্যে হার্ট এ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনকে এক নম্বর কারণ বলে বিবেচনা করা হয়। এই হার্ট এ্যাটাকের কারণ হলো হার্টের নিজস্ব রক্তনালী করোনারী আর্টারীর বস্নক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ২০ জনে ১ জন বা ৪.৮৫% লোকের করোনারী আর্টারী ডিজিজ আছে। আমাদের দেশে যদিও কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই তবুও অনুমান করা যায় এই হার বেশী বই কম নয়। করোনারী আর্টারী ডিজিজ বা বস্নকের সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট বা বাইপাস সার্জারি একটি প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা পদ্ধতি। বাংলাদেশে এই বাইপাস সার্জারি বিগত এক দশকেরও বেশি সময় প্রচলনের ফলে প্রভূত সাফল্য লাভ করেছে এবং রোগীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।


সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাইপাস সার্জারি করে হার্ট এর নিজস্ব রক্ত সঞ্চালন বিকল্প পথে পূনঃস্থাপন করা হয়। এজন্য বিকল্প রক্তনালী বা কনডুইট হিসাবে পায়ের শিরা বা স্যাফেনাস ভেইন, বক্ষপিঞ্জরের ধমনী বা ইন্টার্নাল ম্যামারী আর্টারী, হাতের ধমনী বা রেডিয়াল আর্টারী এবং পাকস্থলীর ধমনী বা ডান গ্যাস্ট্রোএপিপস্নয়িক আর্টারী রোগীর নিজ শরীর থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই বিকল্প রক্তনালী গুলো দিয়ে হার্টের রক্তনালীর বা করনারী আর্টারী বস্নকের বাইপাস বা বিকল্প পথ তৈরী করা হয়। ছবিতে দেখুন


বিগত কয়েক দশকে বক্ষ পিঞ্জরের ধমনী ইন্টার্নাল ম্যামারী আর্টারী এবং পায়ের শিরা স্যাফেনাস ভেইন ব্যবহার ছিল প্রচলিত। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গেছে এই বিকল্প রক্তনালী গুলোও কয়েক বছর পরে বস্নক হয়ে যায় এবং শিরা বস্নক হয়ে যাওয়ার হার ধমনীর চেয়ে উলেস্নখযোগ্যভাবে বেশি। এ যাবতকালের অনেক গবেষণায় জানা গেছে বাইপাস সার্জারির ১০ বছরের মধ্যে শিরা ব্যবহূত গ্রাফটগুলোর কার্যকারীতা থাকে ৬০% কিন্তু ধমনী ব্যবহূত গ্রাফটগুলোর কার্যকারীতা বহাল থাকে ৯০% এরও বেশী। বাইপাস সার্জারিতে যে সমস্ত ধমনী ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে হাতের রেডিয়াল ধমনীর কার্যকারিতা থাকে ৮০% এবং বক্ষ পিঞ্জরের ইন্টার্নাল ম্যামারী ধমনীর কার্যকারিতা বহাল থাকে ৯০% এরও বেশি। অর্থাৎ যে সমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে শিরা দ্বারা বাইপাস সার্জারি করা হয় তাদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ রোগীরই ১০ বছরের মধ্যে করোনারী আর্টারীর বস্নকের লক্ষণ সমূহ যেমন পূনঃ হার্ট এ্যাটাক বা পূনঃ বুকে ব্যথা বা এনজাইনা নিয়ে ফিরে আসে, যার ফলে পূনঃ বাইপাস সার্জারি কিংবা এনজিওপস্নাস্টি বা স্টেন্টিং করাতে হয়।


টোটাল আর্টারিয়াল বাইপাস সার্জারিতে যে শুধু দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল ভাল হয় তা নয়, স্বল্পমেয়াদী সুবিধা যেমন অপারেশনকালে বা অপারেশনের পর হাসপাতালে মৃতু্যর হার বা অন্যান্য জটিলতার হারও শিরা ব্যবহূত বাইপাস গ্রাফটিং এর চেয়ে কম। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, উক্ত মৃতু্যর হার টোটাল আর্টারিয়াল বাইপাস গ্রাফটিং-এ যেখানে ০.২% থেকে ০.৯% সেখানে শিরা ব্যবহূত বাইপাস গ্রাফটিং এ তা ২.৯%।


আমেরিকার বিখ্যাত হূদরোগ হাসপাতাল মেয়ো ক্লিনিক (গধুড় ঈষরহরপ) -এর প্রখ্যাত হার্ট সার্জন ডাঃ সানড (উৎ. ঞ. ঝঁহফঃ) -এর সহযোগী হিসাবে দীর্ঘ সময় কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছে। সেখানে টোটাল আর্টারিয়াল বাইপাস সার্জারি করা ২০০০ রোগীর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে ১০ বছর পরও বাইপাস গ্রাফট হিসেবে ব্যবহূত ধমনীগুলোর কার্যকারিতা ৯০% এরও বেশি বহাল রয়েছে। তাঁর এবং পৃথিবীর অন্যান্য বরেণ্য কার্ডিয়াক সার্জনদের মতে রোগীর বয়স সীমা ৫০-৫৫ বৎসর বা তার নীচে হলে টোটাল আর্টারিয়াল বাইপাস গ্রাফট সার্জারির কার্যকারীতা দীর্ঘ মেয়াদী হয়।


সুদীর্ঘ তিন বছর আমেরিকার মেয়ো ক্লিনিকে (গধুড় ঈষরহরপ) কাজ করার পর সমপ্রতি আমি এ্যাপোলো হসপিটাল ঢাকায় কনসালটেন্ট কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে যোগদান করে টোটাল আর্টারিয়াল বাইপাস গ্রাফটিং অপারেশন সাফল্যের সাথে শুরু করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশে করোনারী আর্টারী বস্নকযুক্ত রোগীরা এই যুগান্তকারী অপারেশনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা পাবেন, পাশাপাশি অসময়ে পূনঃ হার্ট এ্যাটাক বা পূনঃ বুকে ব্যথা বা এনজাইনা নিয়ে পূনরায় বাইপাস সার্জারির ঝুঁকি থেকেও রেহাই পাবেন।

ডাঃ মোঃ কামরুল ইসলাম তালুকদার
কনসালটেন্ট
কার্ডিও থোরাসিক এন্ড ভাস্কুলার সার্জারি
এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকা

الاثنين، 27 ديسمبر 2010

ঘুম না হওয়াটা মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে

রাতে ভালো ঘুম না হলে সকালে উঠে শরীরটা কেমন কেমন লাগে, তাই না? অনেকে আবার দিবানিদ্রাটাও ঠিকমত না হলে মেজাজ খারাপ করে থাকেন। এতদিন ধরে এটা ছিল স্রেফ মানুষের অভিজ্ঞতা। তবে এখন বিজ্ঞানও সুর মেলাচ্ছে মানুষের অভিজ্ঞতার সঙ্গে। সুইডিশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘বিউটি স্লিপ’ বা চমত্কার একটা ঘুম আপনাকে ‘শরীর কেমন কেমন করা’ থেকে তো মুক্ত রাখবেই, পাশাপাশি আপনার চেহারায় ঔজ্জ্বল্য ও মনের সজীবতা দুটোই বাড়াবে। টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন।
এর আগে অবশ্য বিজ্ঞানীরা ভালো ঘুম না হওয়াটা মানুষের জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলেও হুশিয়ার করে দিয়েছেন। এমনকি কোনো অসুখ থেকে দ্রুত সেরে ওঠার ব্যাপারেও ভালো ঘুমের ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। আর এখন সুইডিশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু শরীর ঠিক রাখাই নয়, শারীরিক সৌন্দর্য ও বয়স ধরে রাখার ক্ষেত্রেও বিউটি স্লিপের অবদান রয়েছে।
সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এটা প্রতিভাত হয়েছে, রাতে যারা নিশ্চিন্তে প্রচুর ঘুমোতে পারে তাদের জন্য সে ঘুম চমত্কার ফলদায়ক হয়। এই ঘুমের পরিমাণ হতে হবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। যারা নিয়মিত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম থেকে নিজেদের বঞ্চিত রাখেন বা রাখতে বাধ্য হন, তাদের ক্ষেত্রে ওই চমত্কার ফলাফল উপভোগ করাটা সম্ভব হয় না।
ব্যাপারটা প্রমাণের জন্য তারা ১৮ থেকে ৩১ বছর বয়সী ২৩ জন স্বাস্থ্যবান লোক বেছে নেন। তাদের প্রথমে ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে দিয়ে তারপর তাদের ছবি তোলা হয়। ৩১ ঘণ্টা পর তাদের আবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘুমোতে দেয়া হয়। এ ছবিগুলো এরপর ৬৫ জন সাধারণ দর্শককে দেখতে দেয়া হয়। তারা ৮ ঘণ্টা ঘুমানোদের ছবি আর ৩১ ঘণ্টা পর সামান্য কয়েক ঘণ্টা ঘুমানোদের ছবির মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য বের করে ফেলেন। সামান্য সময়ের মধ্যে একই মানুষের দু’রকম ছবি হওয়ার কারণ হিসেবে গবেষকরা সরাসরি ঘুমাতে পারা আর না পারাকেই দায়ী করেন।
এটাই সুইডিশ বিজ্ঞানীদের পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়তা করে। তারা বলেন, ‘বিউটি স্লিপ’ ধারণা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের অভাব আছে সত্যি। তবে শারীরিক প্রতিক্রিয়া বিচার করলে এর প্রয়োজনীয়তা ঠিকই উপলব্ধি করা যায়।

বাবার খাদ্যাভ্যাসে প্রভাবিত সন্তানের জীবন

সম্প্রতি গবেষকরা জানিয়েছেন, সন্তানের জন্মের আগে বাবা যা খেয়েছিলেন সন্তানরা সেটারই তৈরি। বেড়ে ওঠার সময় বাবা যা খেয়েছিলেন সে খাবারের প্রভাবই শিশুর ওপর পড়তে পারে। খবর টেলিগ্রাফ অনলাইন-এর।

গবেষকরা জানিয়েছেন, বাবার লাইফস্টাইল তার সন্তানের মধ্যে দেখা দিতে পারে কারণ এটা জিনকে সভাবেই সাজিয়ে ফেলে।
ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকরা বংশগতি বিষয়ক এই গবেষণাটি করেছেন। বংশগতির এই প্রভাবটিকে বলা হয় ‘এপিজেনেটিক্স’।
সংবাদমাধ্যমটির বরাতে জানা গেছে, গবেষকরা বাবার খাদ্যভাসের সঙ্গে সন্তানের রোগের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে সেল সাময়িকীতে।
গবেষক অলিভার র‌্যান্ডো জানিয়েছেন, শিশুর জন্মের আগে বাবা-মা কেমন জীবনযাপন করেছেন সেটি শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর কারণ, রোগের অনেকটাই তাদের কাছ থেকে জিনের মাধ্যমে আসতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শিশুর ক্ষেত্রে তার বাবার খাদ্যভাসটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তবে এটি অবচেতন মনেরই ঘটনা বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

সামাজিকতায় মস্তিষ্ক বাড়ে

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা জানিয়েছেন, যারা অনেক বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সময় কাটান তাদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট একটি অংশ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বড়ো। খবর টেলিগ্রাফ অনলাইন-এর।

গবেষকদের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট এই অঞ্চলটির নাম এমিগডালা। এই অঞ্চলটি মস্তিষ্কের অনেক গভীরে অবস্থিত। এমিগডালা হলো মস্তিষ্কের নেটওয়ার্ক কেন্দ্র। আর এজন্যই এই অংশটি সোশ্যালাইজিং এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে নেচার নিউরোসায়েন্স সাময়িকীতে।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক লিজা ফ্লেডম্যান ব্যারেট জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের এই নেটওয়ার্ক আমাদের বন্ধুদের চিনতে এবং অচেনা শত্রুকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। কিন্তু যাদের এই এমিগডালার পরিমাণ বেশি তাদের বন্ধুদের সংখ্যাও বেশি হয়।


গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো এবং বন্ধুদের সংখ্যা বেড়ে গেলে এমিগডালার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ওই ব্যক্তি আরো বেশি সামাজিক হয়ে ওঠেন।

আসেন পাজল্ মিলাই…।

الأحد، 26 ديسمبر 2010

মূত্রনালির ক্যানসার

মূত্রনালি প্রস্রাব নির্গমন করে এবং পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুও বহন করে। এটা পুরুষাঙ্গের মধ্যে এবং মেয়েদের যৌনাঙ্গের সামনে অবস্থিত। মূত্রনালির ক্যানসার কদাচিৎ দেখা যায়। কোনো কোনো সময় মূত্রথলির ক্যানসারের সঙ্গে হয়ে থাকে। বেশির ভাগ সময় স্থানীয় জায়গায় বিস্তৃত অবস্থায় ধরা পড়ে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় ও কারণগুলো
মূত্রনালির ক্যানসারের কারণ অজানা। প্রাথমিক ঝুঁকিপূর্ণ বস্তুর মধ্যে মূত্রথলির ক্যানসার, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এবং যৌনরোগীদের এ রোগ হওয়ার প্রবণতা থাকে। তা ছাড়া ষাটোর্ধ্ব বয়সে বহুদিন ধরে মূত্রনালির প্রদাহ এবং ধূমপানের কারণে হতে পারে।
রোগের লক্ষণগুলো
প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ চোখে পড়ে না। রোগটি বাড়তে থাকলে এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়।
 মূত্রের মধ্যে রক্ত যাওয়া;
 মূত্রের ধারা চিকন ও কমে যাওয়া;
 ঘন ঘন প্রস্রাবে যাওয়া;
 রাত্রে ঘন ঘন মূত্রের বেগ হওয়া;
 পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে যাওয়া;
 প্রস্রাব অজান্তে ঝরে যাওয়া;
 প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া;
 ঘন ঘন প্রদাহ হওয়া;
 মূত্রনালি থেকে রক্ত ও রস ঝরা এবং ফুলে যাওয়া।


চিকিৎসা
এটা রোগের অবস্থা এবং মূত্রনালির কোন অংশ আক্রান্ত তার ওপর নির্ভর করে। রোগীর বয়স, লিঙ্গ, রোগের বিস্তৃতির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। চিকিৎসাগুলোর মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি অন্যতম। সার্জারিই প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরশীল চিকিৎসা। অগ্রবর্তী রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।


সার্জারি (শল্যচিকিৎসা)
এটা রোগের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত অজ্ঞান করে শল্যচিকিৎসা করা হয়। থেরাপি দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া রোগীদের ক্ষেত্রে কারও মূত্রথলিসহ মূত্রনালি ফেলে দিতে হয়। কারও কারও পুরুষাঙ্গের কিছু অংশ ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কারও কারও পুরুষাঙ্গ এবং মূত্রনালি অপসারণ করা প্রয়োজন হয়। অবস্থাভেদে কারও লসিকাগ্রন্থিও ফেলে দিতে হয়। নারীদের মূত্রথলি, মূত্রনালি, প্রসবদ্বার (যৌনদ্বার) ফেলে দিতে হয়। মূত্রথলি ফেলে দিলে বিকল্প পথে প্রস্রাব নির্গমনের ব্যবস্থা করতে হয়। সার্জারি যেসব জটিলতা তৈরি করতে পারে, যেমন— অবশকরণজনিত জটিলতা, খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লাগা, মূত্র ঝরা, রোগ সংক্রমিত হওয়া, মৃত্যুবরণ (১-২ শতাংশ), আবার রোগটি ফিরে আসতে পারে (৫০ শতাংশ), পচন হতে পারে, মূত্রনালি সরু হতে পারে। প্রস্তুতকৃত বিকল্প পথ ছাড়া অন্য পথ দিয়ে প্রস্রাব ঝরতে পারে।


রেডিয়েশন
বিস্তৃত রোগীর ক্ষেত্রে এটা শল্যচিকিৎসার সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়। দুভাবে রেডিয়েশন দেওয়া হয়—১. শরীরের বাইরে থেকে এবং ২. রেডিও অ্যাকটিভ বড়ি বা পিলেট ক্যানসারের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয়। রেডিয়েশন সপ্তাহে পাঁচ দিন হিসেবে ছয় সপ্তাহ দেওয়া হয়।


পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এটা সাধারণত সুস্থ কলাতে আঘাতজনিত কারণে হয়। যেমন—
 অন্য জায়গা দিয়ে প্রস্রাব ঝরা;
 ত্বক জ্বলে যাওয়া;
 ডায়রিয়া, দুর্বলতা;
 মূত্রথলির প্রদাহ;
 খাওয়ার অরুচি;
 চিকন নলে প্রস্রাব হওয়া।


কেমোথেরাপি
এটা এক প্রকার ওষুধ, যা দিয়ে ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করা যায়। এই ওষুধ সাধারণত শিরায় দেওয়া হয় এবং দেহের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের চিকিৎসায় এ চিকিৎসা প্রযোজ্য।


পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
রক্তশূন্যতা, বমি হওয়া, রুচি কমে যাওয়া, মাথার চুল পড়ে যাওয়া, মুখে ঘা হওয়া ও রোগ সংক্রমিত হওয়া।


রোগের ফলাফল সূচক
প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণীত হলে এবং শল্যচিকিৎসা করলে পাঁচ বছর বাঁচার হার প্রায় ৬০ শতাংশ। রোগের পুনরাবৃত্তি হয় প্রায় ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসা নিলে অনেক রোগীই সুস্থ থাকে।

এম এ সালাম
অধ্যাপক, ইউরো-অনকোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।




স্বাস্থ্য বিষয়ক ৭ অনুশিলনে হয়ে উঠুন স্মার্ট রোগী

রোগী দেখা শেষ। সমস্যা শুনে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন চিকিত্সক। রোগী চলেও গেছে কক্ষের বাইরে। নতুন রোগী ঢুকে কেবল বসেছে চেয়ারে। এ সময় পুরোনো ওই রোগী আবার দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা গলিয়ে লজ্জিত গলায় বলল, ‘সরি ডক্টর, একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম…।’



ঘটনা বিরল নয়। বরং প্রতিদিনই চিকিত্সকেরা এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন। রোগী হিসেবে আপনিও নিশ্চয় এ পরিস্থিতিতে পড়েছেন। চিকিত্সকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হয়ে এসেছেন অথবা হয়তো বাড়িই ফিরে এসেছেন। আপনার মনে পড়ল, ‘ওহো, সবচেয়ে জরুরি কথাটাই তো বলা হলো না’ বা ‘আহ্হা, ওই কথাটিও তো জানানো উচিত ছিল’।


ফলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে আপনি খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।
একটু প্রস্তুতি নিলেই কিন্তু এ ধরনের সমস্যা এড়ানো যায়। চিকিত্সকের কাছে পরামর্শের জন্য যাওয়ার আগে কিছুটা প্রস্তুত হয়ে নিন, যাতে তাঁর কাছ থেকে সর্বোচ্চ উপকারটা আপনি নিয়ে আসতে পারেন।


সমস্যার তালিকা তৈরি করুন
চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার আগে আপনি তাঁকে কী কী বলতে চান বা তিনি আপনার কাছে কী কী জানতে চাইবেন, এর উত্তরের একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন। যেমন—আপনি হয়তো মাথাব্যথার জন্য পরামর্শ নিতে চাইছেন।
সে ক্ষেত্রে আপনার চিকিত্সক জানতে চাইবেন, মাথাব্যথা কত দিন ধরে হচ্ছে, কোন সময়ে বেশি হচ্ছে, কোন সময় শুরু হয়, কতক্ষণ ধরে ব্যথা থাকছে, এই ব্যথা আপনার জীবনাচরণের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে ইত্যাদি। মনে রাখবেন, নির্দিষ্ট বিষয়গুলোর একটি তালিকা যত সংক্ষিপ্ত ও কম কথায় গোছানো হয়, ততই ভালো।
সঙ্গে নিন পুরোনো ব্যবস্থাপত্র ও রিপোর্ট
আপনি হয়তো একই সমস্যার জন্য বা ভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগের জন্য চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়েছিলেন। এখন চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার আগে সেসব চিকিত্সার ব্যবস্থাপত্র, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র সঙ্গে নিন। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রভৃতির ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আপনার চিকিত্সা-সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্রের একটি করে ফটোকপি নিজের কাছে রাখুন।
জেনে রাখুন আপনার বংশ-লতিকা
কোনো কোনো রোগের সঙ্গে জেনেটিক কারণ সম্পর্কযুক্ত। রোগের ভবিষ্যত্ ও চিকিত্সা পরিকল্পনার জন্য এ বিষয়টি জানা জরুরি।
প্রায়ই চিকিত্সকেরা জিজ্ঞেস করে থাকেন, আপনার আত্মীয়ের মধ্যে কেউ ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ক্যানসার রোগাক্রান্ত ছিলেন কি না। এ তথ্যগুলো মা-বাবা বা নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে আগেভাগেই জেনে নিন।
পোশাক হতে হবে উপযোগী
অনেক ক্ষেত্রেই শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে থাকে। এ ব্যাপারেও পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন। ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যাতে সহজেই চিকিত্সক আপনাকে পরীক্ষা করতে পারেন। দ্রুত খোলা ও পরা যায়, এমন পোশাক পরে যাওয়াই ভালো। ফুলহাতা বা আঁটসাঁট জামা পরলে রক্তচাপ মাপার ক্ষেত্রে অনেক সময় অসুবিধা হয়।
সঙ্গে নিন নিকটজনকে
কোনো বন্ধু বা আত্মীয়কে সঙ্গে নিন। চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলার সময় ভুলে যাওয়া কোনো বিষয় মনে করিয়ে দিতে বা কোনো বিষয় চিকিত্সকের কাছ থেকে ভালোভাবে বুঝে নিতে বন্ধু বা আত্মীয়ের সাহায্য নিতে পারেন। চিকিত্সকের কাছে যাওয়া এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলাটাই অনেকের কাছে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার বিষয়। নিকটজনের সঙ্গ ওই উদ্বেগ অনেকখানিই প্রশমিত করে রাখতে পারে। খেয়াল রাখবেন, যাঁকে সঙ্গে নিচ্ছেন, তিনি যেন আপনার ঘনিষ্ঠ এবং আপনার রোগ সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল থাকেন।
একটা গোপন কথা ছিল বলবার…
হোক তিনি চিকিত্সক, তবুও তো আপনার কাছে একদমই অপরিচিত একজন মানুষ। অপরিচিত একজন মানুষের সামনে নিঃসংকোচে সব কথা বলা আসলেই বেশ কঠিন। মনে রাখবেন, আপনার সুষ্ঠু চিকিত্সার স্বার্থে কোনো তথ্যই গোপন করা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগী তার ধূমপান বা মদপানের বিষয়টি গোপন করে যেতে চায় বা বিষয়টি তত গুরুতর নয় বলে দেখাতে চায়। এ বিষয়টি একদমই অনুচিত। চিকিত্সককে আপনি খুশি করতে যাচ্ছেন না, যাচ্ছেন আপনার সমস্যার সমাধান জানার জন্য। এ ক্ষেত্রে ‘ডাক্তার কী মনে করবেন’ ভেবে অস্বাস্থ্যকর জীবনাচরণের কথা গোপন রাখা উচিত নয়।
ভালো করে বুঝে নিন পরামর্শ
আপনার চিকিত্সক আপনাকে কী পরামর্শ দিচ্ছেন, তা ভালো করে শুনে নিন। বুঝতে না পারলে আবার জিজ্ঞেস করুন। নতুন কোনো পরামর্শপত্র দেওয়া হলে—ওষুধের নাম, কখন কীভাবে খেতে হবে ভালো করে বুঝে নিন।
আপনার রোগ সম্পর্কে জানুন
এই যুগে আপনার অসুখ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য চিকিত্সকই একমাত্র মাধ্যম নন। অনেক ব্যস্ত চিকিত্সকের চেম্বারে সহকারী থাকেন। চিকিত্সকের ব্যস্ততা বেশি হলে তাঁর সহকারীর কাছ থেকে আপনার রোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।
ইন্টারনেটের মাধ্যমেও আপনি রোগসংক্রান্ত তথ্যাবলি জানতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। হাজারো তথ্যের ভিড়ে আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য চিকিত্সা-সংশ্লিষ্টদের পরামর্শমতো এবং নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে দেখুন। দিন বদলে যাচ্ছে, আপনিও নিশ্চয়ই আধুনিক হয়ে উঠছেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে। এখানেই বা আপনি পিছিয়ে থাকবেন কেন? আপনি রোগী? তো হয়ে উঠুন স্মার্ট রোগী! চিকিত্সকের কাছ থেকে আদায় করে নিন সর্বোচ্চ সহায়তা।

হাঁটু মচকালে করণীয়

জীবনের কোনো না কোনো সময় যে কারোর হাঁটু মচকাতে পারে। হাঁটু এমন একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ জোড়া যা বসতে, দাঁড়াতে, হাঁটতে, দৌড়াতে, উপরে উঠতে এবং নামতে একান্ত প্রয়োজন। এ ধরনের কাজেই অধিকাংশ সময় হাঁটু মচকায়। শরীরের ওজন বহনকারী জোড়াগুলোর মধ্যে হাঁটু অন্যতম।

হাঁটুর গঠন
হাঁটুর জোড়া তিন হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট ও দুটি মেনিসকাস (তরুণাস্থি) থাকে। লিগামেন্ট হলো ইলাসটিক টিসু, যা এক হাড়কে অন্য হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে, জোড়ায় শক্তি প্রদান করে, হাড়ের নড়াচড়ায় অংশগ্রহণ করে এবং জোড়ার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। মেনিসকাস শরীরের ওজন সমভাবে ঊরুর হাড় থেকে পায়ের হাড়ে সরবরাহ করে, হাড়ের প্রয়োজনীয় নড়াচড়ায় সহায়তা করে এবং জোড়ার দৃঢ় অবস্থা বজায় রাখে। মচকানো (টুইসটিং) আঘাতে হাঁটুর লিগামেন্ট ও মেনিসকাস ইনজুরি হয়ে থাকে। মচকানো ইনজুরিতে লিগামেন্ট বিস্তৃত হতে পারে এবং আংশিক বা সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যেতে পারে। হাঁটু মচকানোর জন্য মেনিসকাসের বিভিন্ন ধরনের ইনজুরি ছাড়াও মেনিসকাস আংশিক বা সম্পূর্ণ টিয়ার হতে পারে। ৭০ শতাংশ মচকানো আঘাতে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্টের সঙ্গে মেনিসকাস ইনজুরি থাকে।
মচকানো ইনজুরির কারণগুলো
—হঠাত্ মচকানো গতি।
—আঘাত, রিকশা থেকে পড়ে গেলে, গাড়ি বা মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা।
—ফুটবল, বাস্কেটবল, হকি, কাবাডি ও হাডুডু খেলোয়াড়দের মাঝে হাঁটুর মচকানো ইনজুরি হয়।
—মই থেকে পড়ে গেল।
—উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়লে।
—গর্তে পড়ে গেল।
—সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এক স্টেপ ভুল করলে।
—হাঁটুর বাহির পার্শ্বে সরাসরি আঘাত।


হাঁটু মচকানো ইনজুরির লক্ষণগুলো
—প্রথমে তীব্র ব্যথা, পরে আস্তে আস্তে ব্যথা কমে আসে।
—ব্যথা হাঁটুর বাইর পার্শ্বে এবং পেছনে অনুভূত হবে।
—হাঁটুর ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়।
—আঘাতের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়।
—ফুলা ও ব্যথার জন্য হাঁটু নড়াচড়া করা যায় না।
—দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে।
—আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি ‘পপ’ বা ‘ক্র্যাক’ শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারবে।
—বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়।
—অনেক সময় হাঁটু আটকিয়ে যায়, রোগী হাঁটুকে নড়াচড়া করিয়ে সোজা করে।
—উঁচু-নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়।
—হাঁটু অস্থিতিশীল বা ছুটে বা ঘুরে যাচ্ছে, এরকম মনে হবে।
—দীর্ঘদিন ধরে লিগামেন্ট ইনজুরি থাকলে হাঁটুর পেশি শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়

প্রাথমিক করণীয়
—হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
—বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফুলা কমে আসবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টা পর পর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে ইহা সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এই পদ্বতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।
—হাঁটুতে ইলাসটো কমপ্রেসন বা স্পিল্গন্ট ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে।
—হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে হাঁটুকে হার্টের লেবেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফুলা কম হবে।
—এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন।
—হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরির চিকিত্সা প্রদান করতে সক্ষম এমন চিকিত্সকের কাছে বা সেন্টারে রোগীকে পাঠাতে হবে।


পরীক্ষা-নিরীক্ষা
প্রাথমিক চিকিত্সায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে ওঠার পর, হাঁটুর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে কি কি লিগামেন্ট ইনজুরি হয়েছে এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করা যায়। কখনও কখনও এক্স-রে ও এমআরআই-এর সাহায্য নিতে হয়।

প্রয়োজনীয় চিকিত্সা
হাঁটুর লিগামেন্ট বিস্তৃত (স্ট্রেস) ইনজুরি ও মেনিসকাসের ক্ষুদ্র ইনজুরি হলে প্রাথমিক চিকিত্সায় ভালো হয়। তবে কিছু কিছু আংশিক টিয়ারের ক্ষেত্রে হাঁটুর পেশির ব্যায়াম ও দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি হলে নতুন করে লিগামেন্ট তৈরি করতে হয়। এর মধ্যে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট তৈরি করা জরুরি কারণ যা না করলে হাঁটুতে তাড়াতাড়ি ওসটিও আর্থ্রাইটিস হয়ে জোড়া নষ্ট হতে পারে। বর্তমানে হাঁটুর বাহির থেকে টেনডন নিয়ে ছোট দুটি ছিদ্র দিয়ে আর্থ্রোস্কোপ যন্ত্র হাঁটুতে প্রবেশ করিয়ে নতুন লিগামেন্ট তৈরি করা হয়। বড় ধরনের মেনিসকাস ইনজুরি হলে রিপেয়ার বা রিমোভ করা হয়। আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারির পর নিয়মিত ও পরিমিত পরিচর্যার (রিহেবিলিটেশন) মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
লেখক: কাঁধ ও হাঁটু বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন
ডিজিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস
(ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে), মিরপুর, ঢাকা।

সুস্থ জীবনের জন্য চাই সুনিদ্রা

যান্ত্রিক জীবনের অতি ব্যস্ততায় পর্যাপ্ত ঘুমানোর সময় নেই অনেকের। অথবা হয়তো অনেকেই রাতের পর রাত ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের সামনে বসে পার করছেন। সকাল থেকে আবার পড়াশোনা বা অফিসের কাজ। ঘুমানোর অত সময় কোথায়! কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম জীবনের জন্য, শরীরের জন্য, সুস্থতার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়।

রাতের নির্বিঘ্ন, গভীর ঘুম পরদিন মানুষকে চনমনে রাখে, দিন শুরু হয় নতুন শক্তিতে, নতুন উদ্দীপনায়। এসব আমরা জানি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর পাশাপাশি ঘুমের আরও কিছু উপকারিতার কথা বলছেন, যেগুলো একটু অন্যরকম ও নতুন শোনালেও তা গবেষণা থেকেই পাওয়া।
গবেষকরা বলছেন, যারা কম ঘুমায়, তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দেখা গেছে, যারা রাতে মাত্র ৫ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের দেহে ক্ষুধা উদ্রেককারী হরমোন বেশি নিঃসৃত হয়। এ নিঃসরণের পরিমাণ যারা ৮ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের চেয়ে ১৫ ভাগ বেশি। একই সঙ্গে ক্ষুধা কমানোর হরমোনটিও কম নিঃসৃত হয়। বেশি ক্ষুধার কারণে এরা বেশি খায়, ফলে বেড়ে যায় তাদের বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই।
‘স্লিম ফিগারে’র জন্য চাই পর্যাপ্ত ঘুম।
পর্যাপ্ত ঘুম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একদল ব্যক্তিকে পিয়ানো বাজানো শিখিয়ে তাদের দুই গ্রুপে ভাগ করে দেন। এক গ্রুপ শেখার পরবর্তী ১২ ঘণ্টা ঘুমায়, অপর গ্রুপ এই ১২ ঘণ্টা জেগে থাকে। পরে দেখা যায়, যারা ঘুমিয়েছিল, তারা পিয়ানোতে সঠিক সুরটি তুলতে বেশি পারঙ্গমতা দেখিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, এ সময় অন্য কোনো তথ্য বা কাজ তাদের ব্রেনকে ব্যস্ত না রাখায় শেখা সুরটি স্মৃতিতে ভালোভাবে গেঁথেছে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সুনিদ্রা প্রয়োজন। যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, তখন দেহে ‘মেলাটোনিন’ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ক্যান্সার-প্রতিরোধী এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও। দেখা গেছে, যেসব মহিলা রাতে কাজ করেন, তাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৭০ গুণ বেশি। এছাড়া রাতের পর রাত জেগে থাকা মানুষের গ্যাস্ট্রিক আলসারের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। কারণ, গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পাকস্থলির কোষকে রক্ষা করে যে রাসায়নিক পদার্থ, তা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়ই বেশি নিঃসৃত হয়।
বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতেও ঘুমের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। রাতের পর রাত নিদ্রাহীনতা বার্ধক্যজনিত রোগের তীব্রতা বাড়ায়। অপরদিকে গবেষকরা দেখেছেন, যারা রাতে গড়ে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমায়, তারা সাড়ে চার ঘণ্টার কম ঘুম যাদের তাদের চেয়ে বেশিদিন বাঁচে।
অন্যদিকে, টিনএজারদের নিদ্রাহীনতা তাদের জীবন বিশৃঙ্খল করে তুলতে পারে। এরা অন্যদের চেয়ে বেশি বিষণ্নতায় ভোগে ও কম আত্মবিশ্বাসী হয়। চিকিত্সকরা বলেছেন, যারা ছোটবেলায় নিদ্রাহীনতায় ভোগে, তাদের বয়ঃসন্ধিকালে মাদকাসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ।
তাই জীবনকে অতি ব্যস্ততায় জড়িয়ে না ফেলে নিজের বিশ্রামের জন্য সময় বের করুন, পর্যাপ্ত সময় ঘুমান। যাপন করুন সুস্থ, নীরোগ ও দীর্ঘ জীবন।
(রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে)

গোড়ালি মচকালে করণীয়

গোড়ালি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ জোড়া, যা প্রতিনিয়ত দাঁড়াতে, হাঁটতে, দৌড়াতে এবং উঠা-নামা করতে ব্যবহƒত হয়। এসব কাজের জন্যই গোড়ালি মচকানো বা ইনজুরিতে আক্রান্ত হতে পারে। এ কাজ ছাড়াও গর্তে পড়ে গেলে, রিকশা বা বাস থেকে নামতে গিয়ে, সিঁড়িতে এক স্টেপ ভুল করলে, খেলাধুলার সময়, ডিফেক্টিভ জুতা পরিধান করলে, এমনকি বিছানা থেকে উঠতে গিয়েও গোড়ালি মচকাতে পারে।



ইনজুরির তীব্রতার তারতম্যে গোড়ালির লিগামেন্ট বিস্তৃত হতে পারে এবং আংশিক বা সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যেতে পারে। মচকানো আঘাত কিছু দিন পর ভালো হয়ে যায়। একে তৎক্ষণাত বা একিউট মচকানো বলে। যখন মচকানো ইনজুরি দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রোগীকে আক্রান্ত করে রাখে তখন একে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি মচকানো বলে। মচকানোর ফলে জোড়ায় ব্যথা হয় এবং জোড়া ফুলে যায়। ফুলা ও ব্যথার জন্য জোড়া নাড়াচাড়া করা যায় না। পায়ে ভর দিলে ব্যথা বেড়ে যায়।


■ করণীয়
গোড়াড়ালিকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
২ি-৩ দিন পায়ে ভর না দিয়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হবে।
বিরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফুলা কমে আসবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দু’ঘণ্টা পর পর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে এটা সহ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এ পদ্ধতি আঘাতের ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।
িিস্প­ন্ট ব্যবহার করে পা উঁচু করে রাখলে ফুলা কম হবে।
ইিলাসটো কমপ্রেশন (ইলাসটিক সাপোর্ট বা অ্যাংলেট) ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কম হবে।
এিনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে।
আিঘাতের ৪৮ ঘণ্টা পর কুসুম গরম পানির সেঁক/ঠাণ্ডা সেঁকে ব্যথা কম হবে।
েিগাড়ালির স্বাভাবিক নাড়াচাড়া ও পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।
অিনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি ইনজুরির ক্ষেত্রে ফিজিকেল থেরাপিÑ এসডব্লিউডি, ইউএসটি প্রয়োজন হতে পারে।


■ কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
অসহ্য ব্যথা বা ব্যথা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে।
আঘাতপ্রাপ্ত গোড়ালি কিছুতেই নাড়াতে
না পারলে
ফুলা ছাড়াও গোড়ালি বা পা অস্বাভাবিক
আকৃতি হলে।
খুঁড়িয়ে চার কদমের বেশি হাঁটা না গেলে।
গোড়ালির হাড়ে চাপ দিলে প্রচণ্ড ব্যথা
অনুভূত হলে।
পা ও আঙুলে অবশ ভাব লাগলে।
গোড়ালির পেছনে ব্যথা হলে এবং ফুলে গেলে।
পায়ের আঙুল নিচু করতে অসুবিধা হলে।
পায়ের পেশিতে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে।
চামড়া লাল হয়ে দ্রুত বিস্তৃত হলে।
ইনজুরির তীব্রতা বুঝতে না পারলে বা করণীয় না জানলে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উপস্থিত হলে বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসার শুরুতেই ইনজুরির কারণ জানতে হবে এবং সহ্যের মধ্যে রেখে গোড়ালি পরীক্ষা করে রোগের তীব্রতা নির্ণয় করতে হবে। গোড়ালি এক্স-রে করে (প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই) অন্যান্য ইনজুরি যেমন, ফ্র্যাকচার ও জোড়ার ডিসেপ্লেসমেন্ট নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।


ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং অর্থ্রোস্কোপিক সার্জন
ডিজিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস, মিরপুর, ঢাকা।

জ্বরকে জানুন, সতর্ক হোন

জ্বর আসলে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি বহিঃপ্রকাশ। জ্বর কোনো রোগ নয়। তাই জ্বরে খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু এটি যাতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। জ্বরের কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো-



রোগ নির্ণয়
জ্বরের রোগীর ক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই রোগী বা তার ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে শুনেই জ্বরের কারণ বোঝা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর নিজের বিবৃতি বা তার সঙ্গে অনেক সময় ধরে আছেন এমন কারও বিবৃতি প্রয়োজন হবে। জ্বরের মেয়াদকাল, তাপমাত্রার উঠতি-পড়তি ও ব্যবধান, পরিবারের বা একই বাসা বা কর্মক্ষেত্রে আর কারও জ্বরের ঘটনা ঘটেছে কি-না, সাম্প্রতিক ভ্রমণ, বিশেষ খাদ্যগ্রহণ, কাঁচা বা আধা সেদ্ধ, পোষা বা বন্যপ্রাণী সংস্রব, পশুর বা পোকামাকড়ের কামড় ও কোন এলাকায় বসবাস করছে তা জানা প্রয়োজন। এর সঙ্গে রোগীর শারীরিক পরীক্ষাও জরুরি।


এরপরও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে রক্ত, মূত্র, মল ও এক্সরে অগ্রাধিকার পাবে। তবে কোন সময় কোন পরীক্ষাটি করা হবে তা চিকিত্সকই স্থির করবেন।


চিকিত্সা
অধিকাংশ জ্বরই এমনি নির্দিষ্ট সময় আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। প্রথমেই ভাইরাসঘটিত জ্বর। এক্ষেত্রে শুরু দেহের তাপমাত্রা কমানোর ওষুধ প্যারাসিটামল জাতীয় ও সহায়ক ব্যবস্থাপনা করতে হবে তবে জ্বরের ধরন ও মাত্রা দেখে চিকিত্সক সিদ্ধান্ত নেবেন কার জন্য কী করতে হবে। এজন্য জ্বরকে অবহেলা না করে সত্বর চিকিত্সকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। আর শিশুদের জ্বর হলে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। নিম্নলিখিত উপসর্গ/লক্ষণগুলো জ্বরাক্রান্ত শিশুদের মাঝে দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে।


১। হঠাত্ করে শিশুর আচরণ পরিবর্তিত হলে ২। খুব বেশি বমি হলে বা পাতলা পায়খানা হলে ৩। অনবরত উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে থাকলে ৪। প্রচণ্ড মাথাব্যথার কথা বললে ৫। পাকস্থলীর ব্যথার কথা বললে ৬। অযথা বিরক্ত হলে ৭। ত্বকে কোনো দানা বা গুটি দেখা দিলে ৮। মুখ শুকিয়ে এলে ৯। ক্ষুধা না থাকার কথা বললে ১০। গলায় ব্যথা থাকলে ১১। গলার ভেতর খড়খড় শব্দ হলে ১২। কানে ব্যথা থাকলে ১৩। খিঁচুনি হলে ১৪। ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে ১৫। বুকের ভেতর শন শন শব্দ হলে।


জ্বর কমানোর জন্য স্পঞ্জিং
অনেক ক্ষেত্রেই পুরো শরীর ভেজা নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে একটানা কয়েকবার আলতো করে মুছে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় এবং খুব ভালো বোধ হয় রোগীর। এ কাজে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল ব্যবহার করতে হবে। খুব ঠাণ্ডা জল ব্যবহার করা সমীচীন হবে না। আর শিশুদের ক্ষেত্রে জলে শিশুটিকে বসিয়ে স্পঞ্জ করাই সুবিধাজনক। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর থাকার ঘরের তাপমাত্রা ২৩.৯ ডিগ্রি সে. থাকাই সবচেয়ে ভালো। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে জ্বরে আক্রান্তদের শুধু মাথায় জল ঢালার অভ্যাস লক্ষ্য করা যায়। এটি মোটেও উপকারী নয়। এতে জ্বর তো নামবেই না বরং ঠাণ্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে।


জটিলতা
জ্বর খুব বেড়ে গেলে এর জন্য বিপাকীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বরের কারণে দেহের ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় এবং এর জন্য রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণও বেড়ে যেতে পারে (ডায়াবেটিসের রোগীদের)। অকস্মাত্ তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাও শিশুদের খিঁচুনি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাসে প্রচণ্ড জ্বর হলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
জ্বর সম্ভবত প্রাচীনতম ও সর্বজনগ্রাহ্য অসুখের উপসর্গ। জ্বর দেহের সংক্রমণ প্রতিরোধের বা স্বাভাবিক সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। জ্বরের চিকিত্সার ইতিহাসও সুপ্রাচীন। এসপিরিন জাতীয় ওষুধ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য খুব ভালো। তবে শিশুদের জন্য এসপিরিন দেয়া যাবে না। তাদের জন্য প্যারাসিটামলই ভালো।


ডা. শাহজাদা সেলিম

মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে কেন?

কোন খারাপ খবর শুনে, খুব বেশী ভয় পেলে বা একই রকম নানা কারণে মানুষকে প্রায়ই অজ্ঞান হয়ে পড়তে দেখা যায়। অজ্ঞান অবস্থায় শরীর ঘামে ভিজে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে পড়ে, দৈহিক বোধশক্তি কমে যায়। অজ্ঞান হবার অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমনঃ আলো বাতাসহীন ঘর, অভূক্ত অবস্থা, প্রচন্ড ক্লান্তি, দারুণ যন্ত্রণা, কোন মর্মান্তিক মানসিক আঘাত। প্রশ্ন হল মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে কেন?



অজ্ঞান বা চেতনা লোপ কাকে বলে?


অজ্ঞান কেন হয় জানবার আগে জানতে হবে জ্ঞান বা চেতনা কাকে বলে। চেতনাকে পুরোপুরি বজায় রাখতে হলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল অব্যাহত রাখা দরকার। মস্তিষ্ক তার দরকার মত রক্তের যোগান পেলেই শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কের পুরোদমে কাজ করার মানেই হল জ্ঞান থাকা। তাই মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে কোন রকম অসুবিধা দেখা দিলেই শরীরের অন্যান্য কাজ ব্যহত হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, যেকোন কারণেই হোক মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে কোন গোলমাল ঘটলেই সে গোলমালের ফল হল অজ্ঞান হয়ে পড়া। কেননা রক্তের যোগানে কমবেশী হওয়া মস্তিষ্ক সহ্য করতে নারাজ। আর তাই মাথার সঙ্গে শরীরটাও বিকল হয়ে পড়ে।
বাঁচার উপায়


কয়েকটা কাজ করলে অজ্ঞান হওয়ার হাত থেকে কিছুটা বাঁচানো সম্ভব। কাউকে সেরকম অবসন্ন হওয়ার মত দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে শুইয়ে দেয়া উচিত। তাহলে সামনে ঝুঁকে পড়ে মাথাটাকে হাঁটু পর্যন্ত নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে। এরকম করলে মস্তিষ্ক তার রক্তের যোগান ফিরে পেতে পারে আর তার ফলে জ্ঞান হারাবার ভয় কম থাকে।
হঠাৎ যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে তাহলে তাকে শুইয়ে দিয়ে জামা-কাপড় একটু আলগা করে দেয়া উচিত। শোয়ানোর সময় মাথাটা একটু নিচু দিকে রেখে পায়ের দিকটা উঁচুতে রাখতে হবে। এতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। জ্ঞান ফিরে আসার পর রোগীকে একটু গরম চা বা কফি খাওয়ালে ভাল হয়। আর মাথায় কোন আঘাত বা সর্দি-কাশির ফলে কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত।

ক্লান্তি দূর করতে উষ্ণ পানিতে গোসল

প্রকৃতির এ অমূল্য উপাদান পানির আরেক নাম জীবন। পানি না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণী জগতের কোনো অস্তিত্বই থাকত না। পানির অভাবে সারা জগতে হাহাকার পড়ে যায়। জীবকুলের জীবনদায়ী ওষুধ হলো পানি। পানি শুধু আমাদের তৃষ্ণাই মেটায় না, তার সঙ্গে শারীরিক ক্লান্তিও দূর করে।



আয়ুর্বেদে পানির নানা গুণের বিবরণ রয়েছে। পেটের যন্ত্রণা থেকে শুরু করে মাথা যন্ত্রণা সবই ওষুধের কাজ করে পানি। শীতল পানি যেমন তীব্র গরমে আমাদের পিপাসার্থ হৃদয়কে পরিতৃপ্তি দেয়। সেরকম উষ্ণ পানিরও চরম শক্তি রয়েছে। উষ্ণ পানিতে যদি গোসল করা যায় তাহলে শরীরের সব ক্লান্তিই নিঃশেষ হয়ে যাবে। শরীর ও মন স্বতঃস্ফূর্ত হবে। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ তো উষ্ণ পানিতেই গোসল করেন।


তাছাড়া বিশ্বের সব দেশেই গরম পানির গোসলের প্রচলন রয়েছে। তাই তো আধুনিক চিন্তাধারায় নির্মিত হয়েছে হট টব বাথ। তবে বাথ টব কোনো নতুন ধারণা নয়। ইতিহাসের পাতা উল্টালে বাথ টব অর্থাত্ বাংলায় যাকে বলে স্নানাগার তার অনেক নমুনাই পাওয়া যাবে।

স্মৃতিশক্তি উন্নয়নের কয়েকটি টিপস

স্মৃতিশক্তি তৈরি হয় এক জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যাতে জড়িত থাকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ও বিভিন্ন যোগাযোগ-প্রক্রিয়া। স্মৃতিশক্তি সাধারণত দুই ধরনের—

১) স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি ও
২) দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি।


১. স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি: যখন মস্তিষ্ক তথ্য ধরে রাখে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থাৎ কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য, তাকে স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বলে।
২. দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি: মস্তিষ্ক যখন উদ্যমের মাধ্যমে ক্রিয়া করে, হতে পারে সেটি সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে এবং যা নিজের কাছে খুবই অর্থবহ, সেগুলোই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তির রূপ নেয়।


স্মৃতিশক্তি উন্নয়নের করণীয় টিপস তুলে ধরা হলো-
মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুন: মাংসপেশির শক্তির মতো স্মৃতিশক্তিও ‘ব্যবহার করুন অথবা হারান’-এ নীতিতে চলে। আপনি যত মস্তিষ্কের ব্যবহার করবেন, আপনার স্মৃতিশক্তিও তত ধারালো হবে। ‘নিউরোবিক’ ব্যায়াম যেমন—চোখ বন্ধ করে গোসল করা বা ড্রেসআপ করা, নতুন খেলা শেখা, খবরের কাগজে নতুন নতুন পাজল বা ক্রসওয়ার্ড চর্চা করা, সম্ভব হলে প্রতিদিনই।


মনোযোগ দিন: আপনার স্মৃতিতে ধরে রাখতে হলে বিষয়টি মস্তিষ্কে লেখা হতে হবে আর যদি যথেষ্ট মনোযোগ না দেন, মস্তিষ্কে লেখার কাজটি হবে না। মস্তিষ্কের যথাযথ স্থানে একটি তথ্যেও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় আট সেকেন্ড সময় লাগে। তাই বহু কর্ম একসঙ্গে করতে গেলে মনোযোগ নষ্ট হয়, এটি পরিহার করতে হবে।
আপনার শেখার ধরন বুঝুন এবং সেভাবে শিখুন: অধিকাংশ মানুষ দেখে শেখে, তারা উত্তমভাবে শেখে পড়ে পড়ে অথবা যা দেখার তা দেখে দেখে; কিন্তু কেউ কেউ আছে, তারা ভালো শেখে শুনে শুনে, যদি তারা ক্লাসের লেকচার অডিও বা ভিডিও রেকর্ড করে বারবার শোনে বা দেখে, তাহলে ভালো মনে রাখতে পারে।
যত বেশি সেন্স ব্যবহার করা যায় ব্যবহার করুন: আপনি দেখে দেখে শেখেন ভালো, শব্দ করে পড়ুন, তাতে আপনার আরও একটি সেন্স শেখার কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। এ ছাড়া শব্দ করে পড়াটা যদি ছন্দ হয়, তাহলে আরও ভালো। প্রতিটি তথ্য তার রং, আকার, গঠন ও গন্ধ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। পড়ার পর হাতে লিখলে তা স্মৃতিশক্তিতে গভীরভাবে প্রোথিত হয়। নতুন তথ্যকে আপনার পরিচিত কিছুর সঙ্গে তুলনা করুন।
তথ্যকে সংগঠিত করুন: বিষয়গুলো লিখুন, জটিল বিষয়গুলোর নোট নিন এবং পরে ক্যাটাগরি অনুযায়ীপুনর্বিন্যাস করুন।
চেষ্টা করুন এবং ব্যাখ্যা বের করুন: অধিকতর জটিল বিষয়গুলোর মৌলিক ধারণার ওপর জোর দিন, বিচ্ছিন্নভাবে মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না। জটিল বিষয়টি অন্যকে নিজের ভাষায় বোঝানোর ক্ষমতা অর্জন করুন। বারবার তথ্যের রিহার্সেল করুন এবং অতিরিক্ত শিখুন, যেদিন বিষয়টি শিখলেন, সেটি আবার ঝালাই করুন এবং মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে আবার ঝালাই করুন।
জমিয়ে না রেখে নিয়মিত পড়াশোনা করুন: গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ছাত্র নিয়মিত পড়াশোনা করে, তারা ভালো মনে রাখতে পারে।
প্রাত্যহিক পড়ার রুটিনে পরিবর্তন আনুন: মাঝেমধ্যে প্রাত্যহিক রুটিন পরিবর্তন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া রাতে পড়াশোনা করে পরদিন সকালে বিষয়টি রিভিউ করুন।
স্মৃতিশক্তি-সহায়ক পদ্ধতি অবলম্বন করুন: এ পদ্ধতিতে কোনো বস্তু মনে রাখার জন্য একটি সূত্র (ক্লু) হিসেবে কাজ করে। যেমন—ছবি, বাক্য বা শব্দ। ছড়া বা গানের আকারেও কোনো বিষয়বস্তু মনে রাখা যায়। কৌতুকের উদ্রেক করে (জোকস) এমন সব বিষয়ের মাধ্যমেও কঠিন বিষয়বস্তু মনে রাখা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যবান্ধব অভ্যাসগুলো লালন করুন


ক) নিয়মিত শরীরচর্চা করুন: ব্যায়াম মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ায়, বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। যেগুলো স্মৃতিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খ) ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন: কর্টিসল (একটি স্ট্রেস হরমোন) মস্তিষ্কের হিপপোক্যাম্পাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যদি স্ট্রেস দীর্ঘস্থায়ী হয়। স্ট্রেস মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।
গ) ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন: স্মৃতিশক্তি সংহত করতে ঘুম অত্যাবশ্যক। ঘুমের সমস্যা যেমন—‘ইনসোমনিয়া’ আপনাকে ক্লান্ত রাখবে এবং দিনের বেলায় আপনার মনঃসংযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।
ঘ) ধূমপান থেকে বিরত থাকুন: ধূমপানে মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়ে স্মৃতিহারা হতে পারেন এবং ধমনিকে সরু করে মস্তিষ্কের অক্সিজেন-প্রবাহ কমিয়ে দিয়ে স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দিতে পারে।


(৫) পুষ্টি ও স্মৃতিশক্তি: ফল, শাকসবজি, আবরণীসমেত দানাজাতীয় শস্য ও স্বাস্থ্যবান্ধব স্নেহজাতীয় (শস্যদানার তেল, মাছের তেল) খাদ্যে অনেক স্বাস্থ্য উপকারী গুণ আছে। পাশাপাশি এগুলো স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন ঘটায়। নিচে কিছু স্মৃতিশক্তি-সহায়ক খাদ্য-উপাদান দেওয়া হলো—ভিটামিন বি-৬, বি-১২ এবং ফলিক এসিড আছে পালংশাক ও গাঢ় সবুজ শাক, ব্রকলি, অ্যাসপারাগাস, স্ট্রবেরি, বাঙ্গি, তরমুজ, শিমের কালো বিচি এবং অন্যান্য ডালজাতীয় শস্যদানা, টকজাতীয় ফল ও সয়াবিনে।
অ্যান্টি অক্সিড্যান্টসমূহ আছে জাম, মিষ্টিআলু, লাল টমেটো, পালংশাক, ব্রকলি, সবুজ চা, বাদাম ও বিচি, টকজাতীয় ফল এবং কলিজায়। তাই বিভিন্ন ধরনের রঙিন শাকসবজি ও ফল খান এবং সঙ্গে উদ্ভিদজাত তেল দিয়ে তরকারি রান্না করে সেটা খান। প্রাণিজ তেল আপনার ধমনি সরু ও বন্ধ করে দিতে পারে, এগুলো পরিহার করলে তবেই মস্তিষ্ক আপনাকে ধন্যবাদ দেবে।


মো. ইফতেখার হাসান খান
ফ্যামিলি মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

সুস্থ থাকতে হাত ধোয়া জরুরি

হাতের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজারও জীবাণু আমাদের দেহে সংক্রমিত হচ্ছে। আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ফলে এসব জীবাণুর অধিকাংশই মারা যায়। কিন্তু যখন জীবাণুর পরিমাণ অত্যধিক হয় বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকে তখনই আমরা অসুখে ভুগতে থাকি তৌহিদ সাহেব ৩ মাস ধরে পেটের পীড়ায় ভুগছেন।



এরপর তিনি খাবার মেন্যু পরিবর্তন করলেন। বাইরে খাওয়া তো ছেড়েই দিলেন। অনেক ডাক্তার দেখালেন। টেস্ট করালেন কয়েকবার, ওষুধ খেলেন বিস্তর। ওষুধ খেলে ক'দিন ভালো থাকেন। আবার শুরু হয় ডায়রিয়া। অবশেষে এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলেন। বিস্তারিত শোনার পর ডাক্তার বুঝতে পারলেন তার কোনো জটিল রোগ হয়নি, খাওয়ার আগে সঠিক নিয়মে হাত না ধোয়ার ফলে তার এ অসুখ। ডাক্তারের পরামর্শমতো যখন তিনি সবক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া শুরু করলেন, তার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন। তার সব রোগও গেল উধাও হয়ে।


অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, হাতের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজারও জীবাণু আমাদের দেহে সংক্রমিত হচ্ছে। আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ফলে এসব জীবাণুর অধিকাংশই মারা যায়। কিন্তু যখন জীবাণুর পরিমাণ অত্যধিক হয় বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকে তখনই আমরা অসুখে ভুগতে থাকি। আর অসুখে ভুগলে শারীরিক ভোগান্তি তো আছেই, তার সঙ্গে মানসিক কষ্ট, ক্লান্তিভাব, অফিস কামাই, কাজে ব্যাঘাত, ডাক্তার দেখানো, ওষুধ খাওয়া, অর্থেরও অপচয়। তার চেয়ে হাত ধোয়ার মতো সহজ অভ্যাসটুকু গড়ে তুললে আমরা সব ভোগান্তি আর রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে পারি।


হাত ধোয়া কিন্তু শিশুদের জন্য খুবই জরুরি। প্রতি বছর ৫ বছরের নিচের ৩.৫ মিলিয়ন শিশু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় মারা যায়। শিশুরা যদি হাত ধোয় এবং শিশুদের খাবার তৈরি করতে যদি অভিভাবকরা হাত ধুয়ে নেন, তবে এ মৃত্যু ২৫ শতাংশ কমানো যায়। পাকিস্তানে এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাত ধোয়ার ফলে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ অর্ধেক কমে গেছে। হাত ধোয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয় ডায়রিয়া পরিস্থিতির। বিশ্বজুড়ে সঠিক নিয়মে হাত ধুলে ডায়রিয়াজনিত শিশুমৃত্যু অর্ধেকে নেমে আসবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, শুধু হাত ধুলেই শতাব্দীর উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার যে কথা বলা হচ্ছে তা অনেকখানি অর্জিত হবে। নিয়মিত হাত ধুলে বিভিন্ন কৃমি বিশেষ করে এসকেরিয়াসিস ও ট্রাইচুরিয়াসিসের সংক্রমণ কম হয়। হাত ধুলে চোখের রোগ ট্রাকোমা এবং ত্বকের রোগ ইমপেটিগো কম হয়।


যারা খাদ্য বিক্রি, সরবরাহ ও রান্না করেন তাদের হাত পরিষ্কার রাখা খুবই দরকার। কারণ তাদের মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকাদেরও হাত ধোয়া জরুরি।


হাত ধোয়া বেশি প্রয়োজন, যখন আমরা খাবার বানাই ও খাই তার আগে। যখন কোনো অসুস্থ মানুষের কাছে যাই, তার পরিচর্যা করি, শিশুদের পরিচর্যা করি, কোনো কাটা অংশের পরিচর্যা করি তার আগে অবশ্যই হাত ধুতে হবে। আবার মলমূত্র ত্যাগের পর, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, বাইরে বেড়াতে যাওয়া, অফিস থেকে আসা, হাঁচি-কাশি দেওয়া, অসুস্থ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসার পর হাত ধোয়া উচিত। ক্ষত ধোয়া, জীবজন্তু ঘরে পোষা হলেও তাদের ধরার পর হাত ধুতে হবে। বাচ্চাদের মলমূত্র পরিষ্কারের পরও হাত ধোয়া জরুরি।


হাত ধোয়া এত জরুরি জেনেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রয়োজনীয় মুহূর্তে মানুষের হাত ধোয়ার হার শূন্য থেকে চৌত্রিশ শতাংশ। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে এটি ৬২ শতাংশ। হাত ধোয়ার কিন্তু কিছু নিয়ম আছে। শুধু পানি দিয়ে হাত ধুলে বাহ্যিকভাবে পরিষ্কার হয় সত্যি, কিন্তু জীবাণুমুক্ত হয় না। জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর সাবান, লিকুইড সোপ ও হ্যান্ড রাব বেশি কার্যকর। হাসপাতাল ছাড়া সাধারণ গৃহস্থালি, অফিস-আদালতে হাত জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য সাবান বা লিকুইড সোপ দিয়ে হাত ধুলেই চলে। লিকুইড সোপ নিলে প্রতিবার হাত ধোয়ার সময় অন্তত ৩ মিলিলিটার নেওয়া উচিত। প্রথমে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে এরপর সাবান বা লিকুইড সোপ হাতের কব্জি পর্যন্ত মাখানো উচিত। এরপর হাতের উভয় পাশে, আঙ্গুলের ফাঁকে, নখের চারপাশে ও ভেতরে অন্তত ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড ঘষা উচিত। এরপর পানির স্রোতধারায় (জমানো পানির চেয়ে প্রবহমান পানি বেশি কার্যকর) হাত দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা উচিত। তারপর পরিষ্কার টাওয়াল দিয়ে হাত আলতো করে মুছতে হবে। মোছার সময় ঘষামাজা না করাই ভালো, এতে ত্বকের ক্ষতি হয়। হাত ধোয়ার সচেতনতামূলক বিভিন্ন পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেন। তাদের ধারণা, গরিব দেশগুলোর নিরন্ন মানুষের পক্ষে সাবান কেনাটা বিলাসিতা। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম উগান্ডায় শতকরা ৯৫ ভাগ, কেনিয়ায় ৯৭ ভাগ আর পেরুতে ১০০ ভাগ মানুষের ঘরেই সাবান থাকে, তবে তারা গোসল বা থালা-বাসন মাজতেই সাবান ব্যবহার করেন, হাত ধুতে খুব একটা সাবানের ব্যবহার করেন না। আসলে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া হলো সুস্থ থাকার সবচেয়ে সস্তা উপায়। আমরা সুস্থ থাকার জন্য অনেক নিয়ম মানি, অনেক কিছু খাই, চিকিৎসকের কাছে যাই। অথচ সুলভ মূল্যের একটি সাবান কিনলে আর একটু সচেতন হলে আমরা অনেক নীরোগ থাকতে পারি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারে শিশুদের ডায়রিয়া কমে শতকরা ৩২ ভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষায় ৩২ ভাগ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ২৫ ভাগ আর সঠিক নিয়মে হাত ধুলে ৪৪ ভাগ।


আমাদের দেশে হাত ধোয়ার অভ্যাস গ্রামাঞ্চলের লোকজনের মধ্যে অশিক্ষা এবং সেই সূত্রে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে গড়ে ওঠেনি। শহরাঞ্চলের চিত্র যে খুব আশাপ্রদ তা নয়। লাইফবয়ের শহরভিত্তিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শহরাঞ্চলে শতকরা ৫৭ জন খাবার আগে হাত ধুয়ে থাকেন। শতকরা ১৪ জন সমীক্ষায় সরবরাহকৃত উত্তরপত্রে মলত্যাগের পর হাত ধোয়ার কথা উল্লেখ করেননি। অভিভাবকদের মাঝে দেখা গেছে মাত্র শতকরা ৩৬ ভাগ মলত্যাগের পর এবং শতকরা ৬৮ ভাগ খাবার আগে হাত ধোয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়রিয়া কমাতে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপন, রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সরকারের যে চিকিৎসা ব্যয় হয়, তার চেয়ে অনেক অর্থ কম খরচ হবে যদি জাতীয়ভাবে হাত ধোয়ার কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া যায়। সমাজের সব স্তরের মানুষের উচিত সঠিক নিয়মে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যাপারে নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যদের সচেতন করা।


ডা. ফাহিম আহমেদ রুপম

হাত ধোয়ার সাতসতের

ঠান্ডা লাগা, সর্দিজ্বর, ফ্লু, ফুড পয়জনিং—এ রকম নানা রোগ প্রতিরোধের একটি সহজ ও কার্যকর উপায় হলো ভালো করে হাত ধোয়া।

কখন ধোবেন হাত?
■ প্রায়ই, বিশেষ করে ঠান্ডা লাগলে, ফ্লুর সিজনে হাত বারবার ধুলে ফ্লু বা সর্দিজ্বর লাগা অথবা ছড়ানো দুটিই ঠেকানো যায়।
■ খাদ্য প্রস্তুত করা বা পরিবেশনের আগে ও পরে হাত ধুতে হয়, তাহলে ফুড পয়জনিং যে যে জীবাণু ঘটায়, সেগুলো সংক্রমিত হওয়া বা ছড়ানো—দুটিই ঠেকানো যায়। মুরগি বা গৃহপালিত পাখির মাংস, কাঁচা ডিম বা সি ফুড ধরা, তৈরি করার আগে ও পরে হাত ধোয়া অবশ্যই উচিত।
■ বাথরুমে যাওয়ার পর ও ডায়াপার ব্যবহারের পর হাত না ধুলে সালমোনেলা বা হেপাটাইটিসের মতো সংক্রামক রোগের আক্রমণ ঘটতে পারে।

হাত ধোবেন অবশ্যই:
■ খালি গা স্পর্শ করার পর।
■ বাথরুম ব্যবহারের পর।
■ কফ, কাশ ও হাঁচির পর হাত ধোবেন, ব্যবহার করুন রুমাল বা ডিসপোজ্যাবল টিস্যু।
■ পানাহারের পর।
■ টয়লেট ব্যবহারের পর।
■ এঁটো বাসন ধোয়ার পর।
■ নোংরা যন্ত্রপাতি ও তৈজসপত্র ধরে হাত ধোয়া উচিত
■ খাদ্যদ্রব্য ধরা, প্রস্তুত করার আগে ও পরে।
■ বাচ্চার ডায়াপার বদলানোর পর, ময়লা ধরার পর, ফোন ধরার পর, করমর্দনের পর বা গৃহপালিত জন্তু নিয়ে খেলার পর।

ঠিকমতো হাত ধোবেন
দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন হাত ধোয়ার এসব ধাপ নির্দেশ করেছে—
■ উষ্ণ ধারাজল ও সাবান দিয়ে হাত কচলে ধোবেন, শিশুরা নাতি-উষ্ণ জলের ধারায় হাত ধোবে।
■ হাত দুটি কচলাতে ও ঘষতে হবে অন্তত ২০ সেকেন্ড।
■ হাতের কবজি, হাতের পেছন দিক, আঙুলের ফাঁক ও নখের নিচে ভালো করে ধুতে হবে।
■ এরপর কাগজের টাওয়েল দিয়ে হাত শুকাতে হবে। জলের ধারা তখনো পড়তে থাকবে।
■ পানির কল বন্ধ করার সময় কাগজের টাওয়েল দিয়ে ধরে বন্ধ করতে হবে। সাবান ও পানি না পাওয়া গেলে সংগ্রহ করা যায় জেল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা অ্যালকোহল হ্যান্ড ওয়াইপস।
এতে থাকে ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ ইথাইলকোহল বা আইসোপ্রোপানল। আজকাল অনেক সুপার মার্কেটে এসব পাওয়া যায়। ভ্রমণের সময় এগুলো সঙ্গে নেবেন। রেখে দেবেন গাড়িতে বা ব্যাগে।
জেল স্যানিটাইজার ব্যবহারের সময় হাত ঘষতে থাকবেন, যতক্ষণ না জেল শুকিয়ে যায়। জল ব্যবহার করতে হয় না। জেলে যে অ্যালকোহল থাকে, তা ধ্বংস করে হাতের জীবাণু।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল

সেলুনে চুল কাটার সময় সতর্ক থাকুন

১৬ বছর বয়স ছেলেটির। নরসুন্দরের কাছে চুল কাটার পর একটু ঘাড়-পিঠ মালিশ করে নেয় ৫-১০ মিনিট। বিনিময়ে তাকে কিছু বকশিশ দেয়। একদিন ঘাড় মালিশ করার সময় কট করে একটা আওয়াজ হয়, একটু সামান্য ব্যথাও করে উঠেছিল। কিন্তু ছেলেটি অতটা গ্রাহ্য করেনি। দু-এক দিন পর সে ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করতে লাগল। ক্রমে ব্যথা বাড়ছে।



মা ভাবলেন, হয়তো উল্টাপাল্টাভাবে শোয়ার জন্য ঘাড়ে ব্যথা হয়েছে। মা প্রতিদিন বালিশ রোদে দিতে লাগলেন, ঘাড়ে গরম কাপড় দিয়ে সেঁক দিতে শুরু করলেন। কিন্তু কিছুতেই ব্যথা কম হচ্ছে না; বরং দিন দিন বাড়ছেই। একপর্যায়ে ব্যথা হাতের মধ্য আঙ্গুল পর্যন্ত আসতে শুরু করল। ব্যথার জন্য ঘাড় নাড়ানোও তার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠল। চিকিৎসক পরীক্ষা করে বললেন, ‘স্পনডাইলোসিস’ হয়েছে। ঘাড়ের এমআরআই ও নার্ভ কনডাকশন স্টাডি (স্মায়ুর আচরণ পরীক্ষা) করে সেটি প্রমাণিত হলো।


মেরুদণ্ডের হাড়ের ভেতর থাকে স্পাইনাল কর্ড। সেখান থেকে স্মায়ুর উৎপত্তি। সেই স্মায়ু মেরুদণ্ডের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে এসে আমাদের হাত-পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কারণে ওই স্মায়ু যদি চাপা খায়, তাকে বলা হয় স্পনডাইলোসিস। এটা সাধারণত মধ্য বয়সে হয়, অর্থাৎ চল্লিশের পর, যখন হাড় ক্ষয় হয়ে স্মায়ুর ওপর চাপ খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটার চিকিৎসা হচ্ছে প্রথম অবস্থায় সারভাইক্যাল কলার। এটাতে অবস্থার উন্নতি না হলে অপারেশনও লাগতে পারে। আলোচ্য কিশোরটির এত অল্প বয়সে কেন হলো? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নরসুন্দর ঘাড়-পিঠ মালিশ করে বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। কোনো সময় মাথার ওপর চাপ দেয়, কখনো ঘাড় বাঁ দিকে ও ডান দিকে কাত করে। এসব মালিশ ঘাড়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে ঘাড়ের স্মায়ুতে চাপ পড়ার আশঙ্কা থাকে।


পরামর্শ
* সেলুনে গিয়ে কখনো ঘাড় বা মাথা মালিশ করাবেন না।
* ঘাড় কখনো খুব বেশি পেছনে বা পাশে কাত করতে দেবেন না।
* গাড়িতে সিটবেল্ট ব্যবহার করুন। এতে হঠাৎ করে গাড়ি থামলে করলে ঘাড় অতিরিক্ত ঘুরে যাবে না।


ডা. রাজিবুল ইসলাম রাজ

প্রস্রাবের রং দেখে রোগ চেনা

আমাদের শরীর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১-২ লিটার পানি প্রস্রাব আকারে বেরিয়ে যায়। প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বের করে দেওয়ার কাজটি করে আমাদের দুটি কিডনি। সাধারণভাবে প্রস্রাবের রং পানির মতো কিংবা হাল্কা বাদামি হতে পারে। এই রং নির্ভর করে পানি পানের পরিমাণ, খাদ্য কিংবা কোনো রোগ বা ওষুধের ওপর। তবে বিভিন্ন কারণে তা ঘোলাটে, লাল, গাঢ় হলুদ, সবুজ, কমলা, নীল কিংবা সবুজ রঙের হতে পারে। কাজেই শুধু প্রস্রাবের রং দেখেই শরীরের অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া সম্ভব।



প্রস্রাবের রং অস্বাভাবিক মানেই রোগ নয়। যেমন পানি কম খেলে প্রস্রাব হলুদ হতে পারে। আবার গাজর বা ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি বেশি খেলে প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে। এমনকি যক্ষ্মার ওষুধ রিফামপিসিন কিংবা ফেনোপাইরাজিনের কারণেও প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে। তবে হেপাটাইটিস হলে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

প্রচুর খাবার খেলে কিংবা ফসফেটসমৃদ্ধ খাবার যথা দুধ খেলে ঘোলাটে প্রস্রাব হতে পারে। তবে প্রচুর পানি পান করলে এই সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু এর পরও এটি না কমলে এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া থাকলে ধরে নেয়া যায় ইনফেকশনের জন্য এমন হচ্ছে।


প্রচুর পানি খেলে প্রস্রাব বর্ণহীন হয়। মেলানোমার কারণে কালো বা ডার্ক কালার হয়। এসপারাগাস খেলে প্রস্রাব সবুজ হয়। প্রস্রাব সিউডোমোনাস ইনফেকশন বা উঁচু মাত্রার ক্যালসিয়াম থাকলে প্রস্রাব হালকা নীল হয়।


বিট, ব্লাকবেরি-জাতীয় খাবারে প্রস্রাব লাল হতে পারে। তবে প্রস্রাবের রং লাল হওয়ার অন্যতম কারণ রক্ত বা রক্তের উপাদান। রক্ত থাকলে একে হেমাচুরিয়া এবং হিমোগ্লোবিন থাকলে একে হিমোগ্লোবিনোরিয়া বলে। আঘাতজনিত কারণে বা কিডনি, মূত্রাশয়, মূত্রনালিতে ইনফেকশন, পাথর কিংবা ক্যান্সার হলে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এজিএন বা গ্লুমেরুলোনেফ্রাইটিস কারণে প্রস্রাব লালচে হয়।


রোগ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শরীরে অন্য কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, হাত-পায়ে পানি আসা ইত্যাদি লক্ষণ আছে কি না দেখতে হবে। কিন্তু খাবার, পানি বা কোনো ওষুধ গ্রহণ ব্যতিরেকেই যদি প্রস্রাবের বর্ণ পরিবর্তন হয় এবং উপরের লক্ষণ দেখা যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


ডা. জিয়াউল হক
বিএসএমএমইউ, ঢাকা

বডি ম্যাসাজের নানা কথা

প্রাচীনকাল থেকেই নানা দেশে ম্যাসাজের প্রচলন ছিল। প্রাচীন ভারতের আয়ুর্বেদ শাস্ত্র ও চরক সংহিতার পঞ্চম অধ্যায়ে ম্যাসাজের উপকারিতার কথা বর্ণনা করা আছে। মুঘল আমলে ম্যাসাজ ও তারপর গরম পানিতে গোসল করার পদ্ধতিকে বলা হতো 'শাম্পি'। জিমন্যাস্টিঙ্রে জনক হেরেডিকাস রোগ সারাবার জন্য ম্যাসাজের ওপর বিশেষ গুরম্নত্ব দিতেন। প্রাচীন গ্রীস ও রোমে ম্যাসাজ চিকিৎসার একটা অঙ্গ ছিল। রোমের সম্রাট জুলিয়াস সিজার মাথা ও স্নায়ুর যন্ত্রণায় ম্যাসাজ নিতেন।



স্পর্শের মাধ্যমে স্নায়ুর উত্তেজনা প্রশমিত করে আরামদায়ক সুখানুভূতির সৃষ্টি করা ম্যাসাজের একটি প্রধান বিষয়। ম্যাসাজ করার সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোর কখনই প্রয়োগ করা উচিত নয়, তাতে ক্ষতি হতে পারে।
কখন ম্যাসাজ করবেন না
হার্টের সমস্যা থাকলে।
যে কোন অপারেশনের পরে।
গর্ভাবস্থার প্রথম পাঁচ মাস।
শরীরের কোন অংশ ভেঙ্গে গেলে।
হাঁপানির সমস্যা থাকলে।
ম্যাসাজের জন্য ভিটামিন 'এ' 'ডি' যুক্ত তেল, অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ইচ্ছা হলে এতে চন্দনের তেল কিংবা ল্যাভেন্ডার ওয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। গরমকালে পাউডার ম্যাসাজ করম্নন। অ্যারোমা ওয়েলও ম্যাসাজের পৰে খুবই উপযোগী। ম্যাসাজের যেসব উপকারিতার কথা আগে বলা হয়েছে সে সবের সঙ্গে এতে অতিরিক্তভাবে পাওয়া যায় স্নায়ু ও আবেগঘটিত সমস্যার নিরাময়।
আলোবাতাসযুক্ত শানত্ম, ঠা-া পরিবেশ ম্যাসাজ নেবার জন্য উপযুক্ত।
জাপানের একটি প্রাচীন পদ্ধতি শিয়াতসু। এতে আকুপাংচার পয়েন্টের ওপর চাপ দিয়ে শরীরের এনার্জি বাড়ানো হয়।


বাড়িতে ম্যাসাজ করার চটজলদি উপায়
যে কোন ব্যথার জন্য তিলের তেল, রসুন, আদা, নিমপাতা, হলুদ, গোলমরিচ গরম করে ঠা-া করে ছেঁকে রাখতে হবে। কাঁধ, হাঁটু এসব ব্যথায় হালকা ম্যাসাজ করে লাগালে আরাম পাওয়া যায়। কপর্ুর গুঁড়ো করে পুদিনা পাতার সঙ্গে মিশিয়ে হালকা করে কপালে ম্যাসাজ করে লাগালে মাথাব্যথা, মাইগ্রেনে আরাম পাওয়া যায়।
অনেকৰণ চলাফেরার পর পায়ের ব্যথা কমানোর জন্য অল্প গরম পানিতে দু'ফোঁটা চন্দনের তেল, এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন। পানি থেকে পা তুলে, মুছে তেল কিংবা ময়শ্চারাইজার হালকা করে ম্যাসাজ করম্নন। দেখবেন শরীরের ক্লানত্মি অনেকটা কমে গেছে।


হেয়ার স্পা
এতে প্রথমে পিঠের মাঝখান থেকে ঘাড় পর্যনত্ম ম্যাসাজ করে মাথার রক্ত সংবহন বাড়ানো হয়। শরীরের টেনশন কমাতে এটি খুবই উপকারী।


কখন ম্যাসাজ করাবেন
ম্যাসাজ হচ্ছে প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতি। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন রোগের জন্য যন্ত্রণা হলে তার সঠিক কারণ না জেনে ম্যাসাজ করানো ঠিক নয়। আর এই কারণটা জানতে পারেন একমাত্র ডাক্তাররা।
- মনে রাখবেন ম্যাসাজটা হচ্ছে আরামের জন্য। তার বদলে যদি বেদনা অনুভূত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে এবং ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
- তেল দিয়ে ম্যাসাজ আরামের জন্য হলে ঠিক আছে, কিন্তু যদি আথ্রাইটিস থাকে তাহলে ম্যাসাজ চলবে না।
- আমরা অনেক সময় সেলুনে গিয়ে চুল কাটার পর ম্যাসাজ করাই। আঙ্গুল বা হাত দিয়ে মৃদু আঘাত বা মাথা-পিঠ ঠুকে দেয়া পর্যনত্ম ঠিক আছে, কিন্তু ঘাড় ধরে নাড়ানো-চড়ানো কিংবা ঘাড় মটকানো একেবারেই উচিত নয়। বিশেষত ঘাড়ে যদি ব্যথা থাকে তখন তো একেবারেই নয়। কেননা এতে স্পাইনাল কর্ডে চাপ পড়ে প্যারালাইসিস পর্যনত্ম হতে পারে।
-যাদের দিয়ে ম্যাসাজ করাবেন তাদের শরীরের অ্যানাটমি সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা দরকার।
- ম্যাসাজটা করানো হয় যেখানে রোগী অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন নিজে করতে পারছেন না। কিন্তু যখন পারছেন, তখন তাকে নিজের থেকেই করতে দেয়া উচিত। এতে পেশী সচলতা বাড়বে এবং তা রোগীর পৰে ভাল।
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট অবলম্বনে মাহমুদ আল মেহেদী

শীতে ভ্রমণকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা

আসছে শীত। ভ্রমণ পিপাসুরা পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন এই শীতে কোথায় ঘুরতে যাবেন। দূরে কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে ভ্রমণকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভ্রমণকালীন সময়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা মেনে চলুন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন : হাত ধুয়ে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো খাদ্যদ্রব্য পরিবেশনের আগে, পরিবেশনের সময় এবং হাত দিয়ে খাবার খাওয়ার সময় দু'হাত ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
কাঁচা ও প্রস্তুতকৃত খাবার খান : বিভিন্ন শহরের রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে সাধারণত খোলাভাবে খাবার পরিবেশন করা হয় ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করার জন্য। মনে রাখতে হবে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে যাতে কাঁচা খাবারের সংস্পর্শে প্রস্তুতকৃত খাবার না থাকে। কারণ কাঁচা খাবারে অনেক প্রাণঘাতী রোগজীবাণু থাকে যা প্রস্তুতকৃত খাবারকে দূষিত করতে পারে।
নিরাপদ পানি ও খাদ্য গ্রহণ করুন : পানি ও বরফসহ কাঁচা খাদ্য উপকরণ মারাত্মক জীবাণু ও রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা দূষিত হতে পারে। বাসি ও ছাতা পড়া খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি হতে পারে। কাঁচা খাদ্য ভালোভাবে ধুয়ে ও খোসা ছাড়িয়ে নিলে খাদ্য বাহিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ভ্রমণে সাধারণত পানি বা খাদ্যবাহিত জীবাণুর কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ভ্রমণে ডায়রিয়া হঠাৎ করে বমি, জ্বর এবং তীব্র পেট ব্যথার মাধ্যমে শুরু হয়। ভ্রমণে যদি প্রচণ্ড গরম অনুভব হয় তবে প্রচুর পরিমাণ পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ভ্রমণে বাচ্চাদের বিশেষ করে পরিষ্কার পানি খাওয়ানোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। কারণ যেহেতু বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাই বাচ্চাদের খুব সহজে পানিবাহিত ও খাদ্যবাহিত অসুস্থতা যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ইত্যাদি দেখা যেতে পারে। যদি কোনো কারণে বাচ্চাদের ডায়রিয়া, কলেরা বা আমাশয় দেখা দেয় তবে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর পরিমাণ ওর স্যালাইন খাওয়াতে হতে। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন বাচ্চার পানিশূন্যতা তৈরি না হয়। বাচ্চার শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন না হলে বাচ্চাকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। ভ্রমণকে দুশ্চিন্তামুক্ত, আনন্দময় করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। বিশেষ করে ওরস্যালাইন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, এন্টিসেপটিক ক্রিম, কিছু ব্যান্ডেজ, গজ ইত্যাদি। আসন্ন শীতে আপনার ভ্রমণ আনন্দদায়ক হোক।


মো. মাছুম চৌধুরী, ফার্মাসিস্ট

গোড়ালির ব্যথায় করণীয়

হিল পেইন বা গোড়ালি ব্যথা পায়ের ব্যথাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কর্মঠ লোকদের দৈনন্দিন কাজকর্ম ও বয়স বৃদ্ধির জন্য গোড়ালি ব্যথা হয়। একজন ব্যক্তি এক মাইল হাঁটলে দুই পায়ে প্রায় ১২০ টন ওজনের সমান স্ট্রেস পড়ে। গোড়ালির হাড় পায়ের হাড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং একে ক্যালক্যানিয়াম বলে। হাঁটতে গেলে পায়ের অংশের মধ্যে গোড়ালিই প্রথম মাটির সংস্পর্শে আসে। পায়ের হাড়ের সমন্বয়ে পায়ের আর্চ বা আকৃতি গঠিত হয়। আর্চ (হাড়) পায়ের শতকরা ৮০ ভাগ দৃঢ় অবস্থা রক্ষা করে। বাকি ২০ ভাগ দৃঢ় অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে প্লান্টার ফাসা, টেনডন, লিগামেন্ট ও পেশি।



হিলের ব্যথার কারণগুলো
প্লিান্টার ফাসার প্রদাহ। হিাই আর্চড বা ফ্ল্যাট পা থাকলে প্লান্টার ফাসাইটিস বেশি হয়। ডিায়াবেটিস রোগীরা প্লান্টার ফাসার প্রদাহে বেশি আক্রান্ত হয়। ক্যিালক্যানিয়াম স্পার (অতিরিক্ত হাড়)। িহাড়ের ইনফেকশন। শিরীরের অতিরিক্ত ওজন। হিাড়ের টিউমার। েিফ্রক্সার অব ক্যালকেনিয়াম (হাড়ের স্ট্রেস ফ্রেক্সার)। ক্যিালকেনিয়াম বার্সার প্রদাহ (বার্সাইটিস)। েিপশির প্রদাহ (টেনডিনাইটিস একিলিস)। েিরটরো একিলিস টেনডন বার্সাইটিস। িপ্লান্টার নার্ভ ইন্ট্রাপমেন্ট। িট্রমা বা আঘাত। িআর্থ্রাইটিস। িইলফিটিং জুতা ব্যবহার করলে। িডিফেক্টটিভ জুতা ব্যবহার করলে।
লক্ষণগুলো ৩০% ভাগের কম দুই গোড়ালিতে ব্যথা হয়। িবাম হিলে প্রথম ব্যথা হয়। িআট থেকে ১৩ বছরের মধ্যে এবং ৪০ বছরের ঊধর্ে্ব গোড়ালি ব্যথা বেশি হয়। িব্যথা গোড়ালির তলায় বা পেছনে হয়। িবেশিক্ষণ হাঁটা বা দাঁড়ানো যায় না। িসকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথার জন্য পায়ে ভর দেওয়া যায় না। কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে ব্যথা কিছুটা কমে আসে। অনেকক্ষণ রেস্টে থাকার পর পা মাটিতে ফেলতে অসুবিধা হয়। খালি পায়ে হাঁটলে বেশি ব্যথা হয়। িঅসমতল জায়গায় হাঁটা কষ্ট হয়। িগোড়ালি ব্যথার সঙ্গে কখনো পা জলে যায় এ রকম মনে হবে।


করণীয় বা চিকিৎসা
চিকিৎসা প্রদানের আগে রোগীকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করতে হবে । যেমন_ রক্তের সি বি সি, ব্লাড সুগার, সেরাম ইউরিক এসিড, সেরাম আর এ ফ্যাক্টর, গোড়ালির এক্স-রে এবং নার্ভ কন্ডাকশন টেস্ট। িশক্ত জায়গায় খালি পায়ে হাঁটা নিষেধ।


অসমতল ও পাথরের উপর হাঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে। িউপযুক্ত মাপের জুতা পরিধান করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর জুতা পরিবর্তন করতে হবে। িনরম জুতা বা ইনসোল লাগানো জুতা ব্যবহার করা উচিত। ফ্ল্যাট ফুট হলে আর্চ সাপোর্ট লাগাতে হবে। িপ্রয়োজনে উঁচু হিল ব্যবহার করতে হবে। িগোড়ালি ও টেনডো একিলিসের স্ট্রেসিং ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। িফিজিক্যাল থেরাপি যেমন_ এস ডবি্লউ ডি, এসটি ব্যবহার করা যেতে পারে। িবেদনানাশক ওষুধ সেবন করা। িস্টেরয়েড ইনজেকশন পুশ করলে সাময়িক ব্যথামুক্ত থাকা যায়। িছোট ছিদ্রের মাধ্যমে আর্থ্রোস্কোপ প্রবেশ করিয়ে ক্যালকেনিয়াম স্পার (অতিরিক্ত হাড় ) এবং টিউবেরোসিটি ছোট ছোট টুকরা করে বের করা হয়।


ডা. জি.এম. জাহাঙ্গীর হোসেন
কনসালটেন্ট, হাড় জোড়া, ট্রমা ও আথ্রর্োস্কোপিক সার্জারি
ডিজি ল্যাব মেডিক্যাল সার্ভিসেস, মিরপুর-১০, ঢাকা

শিশুর বধিরতা

জন্ম থেকেই শিশুরা দেখে ও শোনে। কানে শোনার ওপরই নির্ভর করে শিশুর জ্ঞানবুদ্ধি। কথাবার্তাসহ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা। শিশুর কানে কম শোনা বা না শোনাকেই বলা হয় বধিরতা।

* কত ধরনের বধিরতা আছে?
বধিরতা দুই ধরনের হতে পারে। একটা হলো পরিবহনজনিত বধিরতা। এক্ষেত্রে শব্দ বাইরে থেকে কানের ফুটো দিয়ে বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যটি হচ্ছে স্নায়ু বধিরতা। এক্ষেত্রে শব্দ ও অন্তঃকর্ণ থেকে মস্তিষ্কের শ্রবণ অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত স্নায়ুপথে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয়।
* বধিরতার কারণ কী কী?
বংশগত
গর্ভাবস্থায় মা রুবেলা ভাইরাস, সিফিলিস, হারপিস ইত্যাদি আক্রান্ত হলে।
জন্মের সময় ওজন কমে হলে, অপূর্ণাঙ্গ শিশু হলে।
জন্মের ৪০ দিনের মধ্যে মারাত্মক জন্ডিস হলে।
কান পাকা ও কানের বিভিন্ন জটিলতা হলে।
কানে খৈল, ঠা-া লাগা, কানের ফরেন বডি, মধ্যকর্ণের হাড় জোড়া লাগানো থাকলে।
প্রসবকালীন আঘাত এবং জটিলতা।
রক্তের বিভিন্ন অসুখ।
দীর্ঘদিন ধরে কান থেকে পুঁজ পড়লে।
* বধিরতা বোঝার উপায়
তিন মাস বয়সে উচ্চশব্দে শিশু চমকে না উঠলে।
উচ্চশব্দে তিন মাস বয়সে দুধ চোষা বন্ধ না করলে।
ছয় মাস বয়সের পর থেকে শব্দের কারণে মাথা ঘুরিয়ে কান না পাতলে।
কেউ কথা বলতে থাকলে ছয় মাস বয়সে তার দিকে না তাকিয়ে থাকলে।
৯ মাস বয়সে মায়ের ডাকে বা নিজের নাম শুনে সাড়া না দিলে।
এক বছর বয়সে অর্থসহ দু-তিনটা শব্দ বলতে না পারলে।
১৮ মাস বয়সে ২০টি শব্দ বলতে না পারলে।
দুই বছর বয়সে শব্দের জোড়া লাগাতে না পারলে।


বধিরতার চিকিৎসা দুই-তিন বছরের মধ্যে করালে ভালো ফল পাওয়া যায়। তাই এক্ষেত্রে বধিরতা সম্পূর্ণ ভালো করতে জন্মের পর থেকেই শিশু বধিরতায় আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।


- ডা. তাবাসসুম রুমায়লা

অফিশিয়াল কাজকর্মে ব্যথা

আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজকর্ম করে থাকি। এসব কাজকর্ম নিয়মিত করার কারণে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের ব্যথা। যেমনÑ পিঠ বা শিরদাঁড়ায় ব্যথা, কোমর ব্যথা, কাঁধ ব্যথাসহ আরও অনেক।

* কী কী কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে?
ষ বংশগত কারণ। ষ রিউমাটয়েড বা অস্টিও আথ্রাইটিস। ষ টেনাডিনাইটিস। ষ গাইনোভাইটিস। ষ হাঁটুতে আঘাত। ষ লিগামেন্ট সমস্যা।
হাঁটু ব্যথার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।
* কীভাবে ও কেন এসব ব্যথা হতে পারে?
যারা চেয়ারে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন তারা পিঠ বা কোমর ব্যথায় সহজে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ষ যারা কম্পিউটারে একটানা কাজ করেন তাদের কাঁধ, কোমর ও পিঠে ব্যথা হয়। ষ যারা অফিসে লেখালেখি বেশি করেন তাদের কাঁধ ও হাতের জোড়ায়, কনুই ও কব্জিতে ব্যথা হতে পারে। ষ অফিসে দীর্ঘক্ষণ যে কোনো কাজ করলে এমনিতেই মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে।
* এ ধরনের ব্যথায় করণীয়
যেসব কাজ করলে ব্যথাগুলো বাড়ে সেগুলো কম করতে হবে। ষ একটানা বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করে নিতে হবে। ষ বেশিক্ষণ কম্পিউটারের মনিটরে তাকিয়ে না থেকে একটু রিলাক্স করা প্রয়োজন। ষ দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করতে হলে চেয়ারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে পেইন স্পেশালিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ষ রাতে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো গরম কিংবা ঠা-া স্যাঁকা দিতে পারেন। ষ এ ধরনের ব্যথা বিশ্রাম নিলেই সেরে যায়। তবে ব্যথা বেশি হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন।

ডিম্বাণু বেরোনোর সময় ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক

নারীর প্রজনন অঙ্গগুলোর মধ্যে জরায়ু এবং দুটি ডিম্বাশয়ও অন্তর্ভুক্ত। বয়ঃসন্ধির পর থেকে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া (মেনোপোজ) পর্যন্ত গর্ভকাল ছাড়া প্রতিটি নারীর মাসিক চক্র চলতে থাকে। প্রতি মাসে একটির বেশি ডিম্বাণু বড় হতে থাকে এবং মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি পরিণত অবস্থায় স্ফুরিত হয়।



ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে আসা ডিম্বাণুটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হলে ভ্রূণ তৈরি হয়, আর তা না হলে ডিম্বাণুটি ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে মিলিয়ে যায়। আবার নতুন ডিম্বাণু বড় হতে থাকে। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণুটি বের হওয়ার সময় কিছুটা তরল পদার্থ বের হয়ে আসে, যা তলপেটের ভেতরে পড়ে তীব্র ব্যথার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। ডিম্বাণু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে যা কেউ কেউ রোগের উপসর্গ মনে করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। ডিম্বাণু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যোনিপথে পিচ্ছিল জাতীয় স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়—এটা শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কয়েক দিনের মধ্যেই এই স্রাবের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসে। এ জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। স্রাবের সঙ্গে যদি চুলকানি বা প্রদাহ থাকে, তবেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।


এ সময়ে আরও একটি কারণে ভয় পেয়ে মহিলারা চিকিৎসকের কাছে যান, তা হলো, ওভুলেশন পেইন অর্থাৎ ডিম ফোটার ব্যথা। মাসিক শুরু হওয়ার দিন থেকে হিসাব করে চতুর্দশ দিনে সাধারণত ডিম্বাণুু ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে আসে। যাঁদের মাসিক অনিয়মিত, তাঁদের প্রতি মাসে ডিম্বাণুর স্ফুরণ নাও হতে পারে; তাই তাদের কোনো মাসে ব্যথা হতে পারে আবার কোনো মাসে এই ব্যথা নাও হতে পারে। যাঁরা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খান, তাঁদের ডিম্বাণু বড় হয় না। তাই তাঁদের এই ব্যথা হয় না। স্বাভাবিক ক্ষেত্রেও অনেক মহিলা ব্যথা অনুভব করেন না। ডিম্বাণু স্ফুরণের সময় হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা তলপেটের যেকোনো এক পাশে শুরু হয়ে পুরো তলপেটে এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। বসতে, হাঁটতে বা রিকশায় চলাচল করতে কষ্ট হতে পারে। এ অবস্থায় ব্যথা তীব্র হলে একটি বা দুটি প্যারাসিটামল খেলেই ব্যথা সেরে যায়। কোনো ওষুধ না খেলেও দু-তিন দিনের মধ্যেই তা সেরে যায়। ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রাও একটু বাড়তে পারে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। এই তাপমাত্রার পরিবর্তন হরমোনের পরিবর্তনের জন্য। এ ধরনের ব্যথা বিবাহিত-অবিবাহিত যে কারোরই হতে পারে। কাজেই ঘাবড়াবেন না। মাসিক চক্রের মাঝামাঝি সময়ে অতিরিক্ত সাদা স্রাব এবং হঠাৎ তলপেটে ব্যথা হলে ওভুলেশন পেইন এবং ওভুলেশনকালীন শারীরিক পরিবর্তনের কথা মাথায় রাখুন। একজন নারী হিসেবে আপনার নিয়মিত ডিম্বাণু তৈরি হচ্ছে জেনে খুশি হন।


রওশন আরা খানম
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ সহকারী
অধ্যাপক, বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা

নারীর পিরিয়ডের সমস্যা

কৈশোর থেকে পরিপূর্ণ নারী হয়ে ওঠার জন্য শরীরের ভেতরে ও বাইরে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের মেয়েদের বিভিন্ন রকম পরিবর্তন হয়। অনেক পরিবর্তনের অন্যতম একটি হলো রজঃস্রাব, যা সাধারণত মাসে মাসে হয়—তাই এটাকে মাসিক বা পিরিয়ড অথবা সাইকেলও বলা হয়। সাধারণত এটা তিন থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। এ মাসিকই আবার অনেক সময় দুই বা তিন অথবা চার মাস পরপর হয়। আবার কখনো কখনো অতি অল্প বা খুব বেশি রক্তস্রাব হতে পারে। মাসিক নিয়মিত হওয়ার জন্য সঠিক ওজন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আবহাওয়া, জলবায়ুর পরিবর্তন ও শরীরের ভেতরের বিভিন্ন গ্রন্থির পরিমাণমতো নিঃসৃত হরমোন প্রয়োজন। এসব গ্রন্থির মাঝে রয়েছে থাইরয়েড, অ্যাডরেনাল ও ওভারি। অনিয়মিত ও অস্বাভাবিক মাসিকের সম্ভাব্য কোনো কারণ জানা না থাকলে তাকে ডিইউবি বা ডিসফাংশনাল ইউটেরাইন ব্লিডিং বলা হয়। বয়স অনুসারে ডিইউবিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে—



১. বয়ঃসন্ধিকালীন: এটা মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে রক্ত যাওয়া চলতেই থাকলে মেয়েরা ও তাদের অভািবকেরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকে। ফলে শরীর খুব শুকিয়ে যেতে পারে বা মাত্রাতিরিক্ত স্থূল হতে পারে। আবার অতিরিক্ত রক্ত যাওয়ার জন্য রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে।
২. প্রজননকালীন: এ সময় মাসে মাসে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় বা ১০-১২ দিন পরপর বা সারা মাসেই অল্প অল্প রক্ত যেতে পারে।
৩. প্রিমেনোপোজাল বা রজঃনিবৃত্তির আগে: সাধারণত মাসিক বন্ধ হওয়ার আগে ৪০ থেকে ৪৮ বছর বয়সে এ ধরনের অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়।


কেন এমন হয়?
জরায়ুতে রক্ত সরবরাহ করা ও রক্ত বন্ধ করার জন্য শারীরবৃত্তিক সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। যদি কোনো কারণে সমন্বয়হীনতা হয় বা অনেক সময় অতিরিক্ত আবেগ, দুশ্চিন্তা (যেমন পরীক্ষার আগে), অতিরিক্ত দুঃখবোধ (আত্মীয় বিয়োগ) বা বিবাহিতদের যৌন অসহযোগিতার কারণে এ রকম হতে পারে।


রোগ নির্ণয়
সঠিক ইতিহাস ও উপযুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা কারণগুলো বাদ দিয়ে ডিইউবি শনাক্ত করতে হবে। রোগীর কোনো রক্তক্ষরণজনিত রোগ বা আঘাতজনিত রক্তপাত হচ্ছে কি না তাও দেখতে হবে। রোগীকে পূর্ণাঙ্গ শারীরিক ও প্রয়োজনে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করাতে হবে, যেমন রক্তের সিবিসি, বিটি, সিটি, প্রথ্রম্বিন সময়, আলট্রাসনোগ্রাম ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির টি-থ্রি, টি-ফোর, টি-এসএইচ পরীক্ষা করতে হবে। সুযোগ-সুবিধা থাকলে প্রয়োজনে হিস্টারোস্কপির সাহায্যে রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সা দুটোই সম্ভব।


চিকিত্সা
প্রথম ধাপ: বয়স অনুযায়ী কাউন্সেলিং করে আবেগতাড়িত কারণ, যেমন দুশ্চিন্তা ও দুঃখ, যৌন কারণগুলো কিছুটা লাঘব করা যেতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধগুলো নিয়মিত সেবন করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায়। ওজন বেশি হলে তা কমাতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। রক্তশূন্যতার জন্য লৌহযুক্ত খাবার, ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ খেতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রক্ত নিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: ননস্টেরোয়ডেল ব্যথানাশক ওষুধ, রক্ত জমাটবান্ধব ওষুধ দিতে হবে। প্রয়োজনে হরমোন প্রজেস্টেরোন এক থেকে ২৫ দিন বা ইস্ট্রোজেনের সঙ্গে শেষ ১০ দিন বা কম্বাইন্ড পিল, বাহুতে ইমপ্লান্ট ও ডিভাইস (মিরেনা) জরায়ুর ভেতর দেওয়া যেতে পারে।
তৃতীয় ধাপ: বিভিন্ন ওষুধে যখন কাজ হচ্ছে না বা রোগী আর চিকিত্সা নিতে রাজি হচ্ছে না, তখন অপারেশন প্রয়োজন হবে। ডিঅ্যান্ডসি, অ্যান্ডোমেট্রিয়াল এবলেশন বা রিসেকশন বা হিস্টারোস্কপির মাধ্যমে চিকিত্সা দেওয়া হয়ে থাকে। রোগীর বয়স ৪০ থেকে ৪৫ হলে বা ফ্যামিলি কমপ্লিট হলে জরায়ু ফেলে দেওয়াই যুক্তিসংগত।
একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, প্রকৃত চিকিত্সা দেওয়ার আগে উপযুক্ত ইতিহাস ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে অস্বাভাবিক রজঃস্রাবের কারণ বের করতে হবে।
প্রয়োজনীয় চিকিত্সা অবশ্যই ধাপে ধাপে দিতে হবে।


হামিদা বেগম
সহকারী অধ্যাপক (প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।