الأحد، 26 ديسمبر 2010

উচ্চ রক্তচাপ এবং করণীয়

উচ্চ রক্তচাপ বর্তমান বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। সারা বিশ্বে এখন প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। শরীরের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরত্বপূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। সকলকে উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা, এ ব্যাপারে সচেতন করা, প্রতিরোধমূলক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং এর জটিলতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করাই বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের উদ্দেশ্য। তাই প্রতি বছর ১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।

উচ্চরক্তচাপঃ
শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে যখন সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০মি.মি.পারদ চাপের এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০মি.মি.পারদ চাপের বেশি হলে উচ্চরক্তচাপ চিহ্নিত করা হয়। বয়স এবং লিঙ্গভেদে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি হলে তাকে উচ্চরক্তচাপ এবং কম হলে তাকে নিম্নরক্তচাপ বলে। তবে হঠাৎ করে সাধারণ নিয়মের অতিরিক্ত রক্তচাপ বাড়লেই তাকে উচ্চরক্তচাপ হিসেবে ধরা যাবে না। রাতে ভালো ও পরিমিত ঘুমের পর যদি ভোরে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পরপর তিন দিন রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি পাওয়া যায় তখন তাকে উচ্চরক্তচাপ বলা যাবে। কারণ অতিরিক্ত চিন্তা, পরিশ্রম, মানসিক অশান্তিতে বা উত্তেজনার কারণে ক্ষণিকের জন্য সিস্টোলিক রক্তচাপ বাড়তে পারে। কিন্তু ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার অতিরিক্ত হওয়া মানেই রোগীর উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। উচ্চরক্তচাপ কোনো রোগ নয়; বরং এটি অন্য কিছু রোগের উপসর্গ মাত্র।


উচ্চরক্তচাপের প্রকারভেদঃ
উচ্চরক্তচাপ চার প্রকারঃ
১) সিস্টোলিক রক্তচাপঃ-সীমা -১০০-১৪০মিমিপারদ, গড় -১২০মিমিপারদ
২) ডায়াস্টোলিক রক্তচাপঃ- সীমা-৬০-৯০মিমিপারদ, গড়-৮০মিমিপারদ
৩) পালস রক্তচাপঃ- সীমা-৩০-৪০মিমিপারদ
৪) গড় রক্তচাপঃ- সীমা-৭৮-৯৮মিমিপারদ


কারণগত প্রকারভেদঃ
১) প্রাইমারী উচ্চরক্তচাপঃ যে কোন রোগের অনুপস্থিতিতে এ ধরনের রক্তচাপ দেখা যায়। ৯০-৯৫ শতাংশ উচ্চরক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। একে প্রাইমারি উচ্চরক্তচাপ বলে। এই প্রাইমারি উচ্চরক্তচাপের জন্য কিছু নিয়ামকের ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এগুলো হলোঃ জেনেটিক কারণ অথবা পারিবারিক উচ্চরক্তচাপের ইতিহাস, স্থূল ও মেদবহুল শরীর, ধূমপান, বেশি লবণ খাওয়া, বেশি অ্যালকোহল সেবন প্রভৃতি।
২) সেকেন্ডারী উচ্চ রক্তচাপঃ রোগের উপস্থিতির কারণে এই রক্তচাপ হয়ে থাকে। যেমন ¬ কিডনিজনিত রোগ, হরমোনগ্রন্থিজনিত রোগ, রক্তনালীর জন্মগত ত্রুটি, গর্ভধারণজনিত জটিলতা এবং দীর্ঘ দিন বিশেষ কোনো ওষুধ সেবন যেমন¬ জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, স্টেরয়েড, লবণযুক্ত কোনো ওষুধ, অ্যালকোহল, গর্ভাবস্থা, বৃক্ক সম্পর্কিত রোগ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি জনিত রোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণঃ
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা, ঘাড় ব্যথা, চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া বা চোখে ঝাপসা দেখা, রাতে ঘুমাতে না পারা, সবসময় খিটখিটে মেজাজ থাকা।

উচ্চরক্তচাপ জনিত জটিলতাঃ
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাঃ স্ট্রোক, হাইপারটেনসিভ এনসেফালোপ্যাথি, প্যারালাইসিস, মস্তিষ্কে জটিলতা¬ স্ট্রোক, মস্তিষ্কের সাবঅ্যারাকনয়েড স্পেসে রক্তক্ষরণ প্রভৃতি।
হৃৎযন্ত্রের জটিলতাঃ হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক ও ফেইলিউর, করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রভৃতি।
রেচনতন্ত্রের জটিলতাঃ বৃক্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়া, রেনাল ফেইলর প্রভৃতি।
চোখের রেটিনায় জটিলতাঃ হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি, দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত, প্যাপিলিওডিমা ইত্যাদি।

উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধের উপায়ঃ
১) শরীরের ওজন সীমার মধ্যে রাখতে হবে।
২) হাঁটা,খেলাধূলা বা শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস করতে হবে।
৩) ধুমপান থেকে বিরত থাকা।
৪) কাঁচা লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
৫) জীবনধারার পরিবর্তনঃ দুশ্চিন্তা পরিহার করা, অতিরিক্ত চিন্তা পরিহার করে সহজ-সরল স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে, সকাল অথবা বিকেলে হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করতে হবে।

উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসাঃ
১) এসিই ইনহিবিটরঃ – ক্যাপটোপ্রিল,অ্যানালেপ্রিল, লিসিনোপ্রিল
২) এনজিওটেন্সিন রিসেপ্টর ব্লকার
৩) আলফা ব্লকারঃ প্রাজোসিন
৪) বিটা ব্লকারঃ প্রোপ্রানোলল, অ্যাটেনোলল
৫) ডাইইউরেটিকসঃ থায়াজাইড্‌, ফ্রুসেমাইড্‌, অ্যামিলোরাইড
৬) ক্যালসিয়া চ্যানেল ব্লকারঃ নিফেডিপিন, অ্যামলোডিপিন, ভেরাপামিল সাধারণত ডাইইউরেটিকস উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে এসিই ইনহবিটর ব্যবহার করা হয়। এজন্য চিকিসকের পরামর্শ ব্যতিত মেডিসিন সেবন করা যাবেনা।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এলে এবং নিয়মকানুন মেনে চললে যেকোনো মানুষ সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে। সর্বশেষ একমাত্র সচেতনতাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং প্রতিরোধ করা যায়। তাই সবাই সচেতন হোন এ ব্যাপারে।

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق