আজকাল আমরা খুব ব্যস্ত
পড়াশুনা, চাকরি, ব্যবসা, ইত্যাদি কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত যে আমাদের নিজেদের দিকে, বিশেষ করে নিজেদের শরীরের দিকে খেয়াল রাখার কোনো প্রয়োজন মনে করি না
আমরা কাজের শেষে বা মাঝে গোগ্রাসে মজাদার সব খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে জীবনের আনন্দ খুজি
কিন্তু এর পরিনাম কি? হাঁ ওজন তো বাড়েই, সেই সাথে ভয়াবহ সব রোগ–ব্লাড প্রেসার, Cholesterol, ডায়বেটিস, হার্টের সমস্যা ইত্যাদিও হতে পারে
তাই কি করবেন? আমার এই ব্লগে আমি সব সময় যেটা বলি– নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত আহার, ব্যালান্স ডায়েট, আর হেলদি লাইফ স্টাইল মেনে চললে কোনো অসুখই আপনাকে কাবু করতে পারবে না
প্রতিদিন নয় ,সপ্তাহে ৪/৫ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট দ্রুত হাটলেই আপনার জীবনের অনেক উন্নতি হবে
যারা ব্যায়াম করেন না, তারা কিছুদিন হাটলেই বুঝবেন এর কত উপকারিতা, শরীরটা কত ঝরঝরে মনে হচ্ছে
শরীর টাকে একটু কর্ম চঞ্চল করতে হবে, কারণ আমাদের শরীর কাজ করার জন্যে বা ব্যায়াম করার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে
তাই ঠিক মত কর্মচঞ্চল না থাকলে বা ব্যায়াম না করলে, শরীর ফিট রাখা সম্ভব না
তাই আপনাদের জন্য সব চেয়ে সহজ ব্যায়াম হতে পারে — হাঁটা, যা একটি low impact কার্ডিও ব্যায়াম
হাঁটা যতই সহজ হোক না কেন, এর অনেক উপকারিতা ও নিয়ম কানুন আছে
এগুলো জানা আবশ্যক
তা না হলে আপনি সঠিক ফল পাবেন না
হাঁটার উপকারিতা:
ওজন কমায় ও নিয়ন্ত্রণ করে
ব্লাড প্রেসার, Cholesterol, Arthritis, ডায়বেটিস, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি কমায়
স্ট্রোক হবার ঝুঁকি কমায়
হাঁড় শক্ত করে
রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে
ফলে হার্ট ভালো থাকে, শরীরের সামগ্রিক শক্তি বা ফিটনেস বাড়ে
ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কমায়
মাসেলের শক্তি বাড়ায়
হেলদি BMI ধরে রাখে বা অর্জন করা যায়
হেলদি Waist-to Hip Ratio ধরে রাখে বা অর্জন করা যায়
Metabolism বাড়ায়
শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো থাকে
তারুণ্য ধরে রাখে
আয়ু বাড়ায়
ব্রেইনের কার্যকারিতা বাড়ায়
ভালো ঘুম হয়
স্মরণ শক্তি বাড়ায়
মন প্রফুল্ল রাখে, মানসিক অবসাদ দূর করে ও মন ভালো করে
মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
কি ভাবে হাঁটা শুরু করবেন?
প্রথমে জানুন কেন হাঁটবেন? আপনি কি ওজন কমাতে চান? নাকি ফিট থাকতে চান বা ফিটনেস বাড়াতে চান?
যদি আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে হাঁটা শুরুর আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন
হাঁটার শুরুতে আপনার ওজন, BMI, Waist-to-hip ration দেখে রাখুন, প্রয়োজনে লিখে রাখুন
আপনি কোথায় হাঁটবেন? ঠিক করুন
বাড়ির বাগানে, পার্কে নাকি ট্রেড মিলে?
প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটবেন ও ভালো ফল পাবেন –এভাবে মন স্থির করুন
ফাঁকি দিলে আপনিই ভুক্তভোগী হবেন
এটা বুঝুন
দরকার হলে একজন ভালো হাঁটার সঙ্গী যোগাড় করতে পারেন, যিনি আপনাকে নিয়মিত হাঁটার জন্য অনুপ্রানিত করবেন
আপনার দৈনন্দিন কাজের রুটিন অনুযায়ী হাঁটার রুটিন ঠিক করুন ও সেটা মেনে চলুন
কবে, কখন, কতটা সময় হাঁটবেন আগেই রুটিন তৈরী করে নিন
সপ্তাহে ৫ দিন হলে ভালো হয়
৬ দিন হলেও ক্ষতি নেই, তবে একদিন বিশ্রাম দিলে ভালো
৫ দিন সম্ভব না হলে কমপক্ষে ৩ দিন হাঁটুন
শুরুতে অনেক কষ্ট হবে, কিন্তু একটু ধৈর্য ধরলে, শরীরে কিছুদিন পরে সহ্য হয়ে যাবে
তাই শুরু করুন ৫-১০ মিনিট হাঁটা দিয়ে
বেশি বেশি করতে যাবেন না
শরীর কে প্রথমেই বেশি চাপ দিবেন না
১০ মিনিট কিছুদিন হেটে যদি মনে হয় আপনি ভালো বোধ করছেন, তখন হাঁটার সময় ও স্পিড আস্তে আস্তে বাড়ান
যেমন : ১০ মিনিট থেকে ১৫/২০ মিনিট বাড়ান
আস্তে আস্তে বাড়িয়ে মোট হাঁটার সময় কমপক্ষে ৩০ মিনিট করুন
চাইলে এক ঘন্টাও করতে পারেন
হাঁটার সময় লক্ষ্য রাখুন
হাটার সময় আপনার হার্ট রেট বা বিট খেয়াল রাখুন
হার্ট বিট বেড়ে গেলে হাঁটার স্পিড কমিয়ে দিন
খারাপ লাগলে বা হার্ট বিট খুব বেশি বেড়ে গেলে হাঁটা বন্ধ করে দিন
হাঁটার জন্য নিরিবিলি,শান্তিপূর্ণ জায়গা বেছে নিন, যাতে মনের আনন্দে হাঁটতে পারেন
ধুলো বালি, রোদ, শব্দ দূষণ, ময়লা আবর্জনা পূর্ণ পরিবেশ ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন
হাঁটার মাঝে থামিয়ে অন্য কাজ করবেন না
মনোযোগ দিয়ে হাঁটুন ও আপনি হাঁটছেন বা ব্যায়াম করছেন এটা মনে রাখুন
তা না হলে ভালো ফল পাবেন না
হাঁটতে ভালো না লাগলে, আলসেমি ও মন খারাপ করে হাঁটলে কোনো লাভ নেই
হাঁটার মাঝে মাঝে অল্প পরিমানে পানি খান
কি ভাবে পানি খাবেন? ক্লিক করুন
হাঁটার শেষে ভালো মত গোসল করে নিন
কারণ হাঁটার ফলে যে ঘাম ও ময়লা জমে তা শরীরের জন্য খারাপ
তাই হাঁটার শেষে সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে ভালো মত গোসল করা উচিত
হাঁটার প্রয়োজনীয় জিনিস
হাঁটার জন্য লাগবে ভালো মানের কেডস বা জুতা, মোজা
আরামদায়ক টি শার্ট বা গেঞ্জি এবং ট্রাউসার
একটি ছোট ঘাম মুছার তোয়ালে ও পানির বোতল
বাইরে হাঁটলে, রোদ থাকলে, সান স্ক্রিন মেখে নেয়া ভালো
প্রয়োজনে টুপি ও সান গ্লাস সাথে নিতে পারেন
হাঁটার সময় চেষ্টা করবেন অপ্রয়োজনীয় ও ভারী জিনিস সাথে না রাখতে
Businessweek.com এ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে যে, আপনি যত বেশি হাঁটবেন, তত আপনার ডায়বেটিস হবার সম্ভাবনা কম হবে
সেখানে আরো প্রকাশিত হয়েছে , Australia র গবেষকদের গবেষণায় এটা প্রমানিত হয়েছে যে– যিনি সপ্তাহে ৫ দিন প্রতিদিন ১০,০০০ স্টেপ হাঁটেন, তিনি ডায়বেটিস থেকে তত দূরে থাকেন যিনি প্রতিদিন ৩,০০০ স্টেপ হাঁটেন
তাই দেরী না করে আজই শুরু করুন নিয়মিত হাঁটা
২৫ বছরের উপরে যারা তাদের জন্য হাঁটা অত্যাবশক
হাঁটার সব চেয়ে বড় সুবিধা–এটির জন্যে বাড়তি কোনো যন্ত্রপাতি বা কোনো ব্যায়ামের উপকরণ লাগে না
হাঁটা অন্যান্য ব্যায়ামের চাইতে সোজা, নিয়মিত হাঁটা একটি মজার কাজ
যাদের জিমে যাওয়া সম্ভব হয় না, তাদের জন্য হাঁটা একটি অনেক ভালো ব্যায়াম হতে পারে
তাছাড়া সব কাজ বাদ দিয়ে মনের আনন্দে নিয়মিত হাঁটলে মনটাও সতেজ থাকে
হাঁটার মাঝে কথা না বলে নিজের জন্য ভালো কথা চিন্তা করলে এটাকে বলা যায় এক রকম meditation
ফলে আপনার জীবনে উন্নতি তো হবেই, আপনি আরো বেশি কাজ করার জীবনী শক্তি পাবেন
কখন হাঁটবেন?
আপনার সুবিধামত সময়ে হাঁটতে পারেন
তবে শরীরের কথা চিন্তা করলে বিকালে হাঁটা সবচেয়ে ভালো
কারণ তখন মাসেল ও joint flexible থাকে
শরীরের তাপমাত্রা সকালের চাইতে বেশি থাকে
তখন সব কাজ শেষ করে টেনশন মুক্ত হয়ে হাঁটা যায়
তবে খুব কাজের চাপ থাকলে হয়ত হাঁটার রুটিন মিস হতে পারে
কিন্তু সকালে হাঁটলে মাসেল ও joint শক্ত হয়ে থাকে
তাই হাঁটার ফল ঠিক মত পাওয়া যায় না
আবার শরীরও ওয়ার্ম আপ হতে সময় বেশি লাগে
তাই বিকালে হাঁটা উত্তম
কিন্তু বিকালে পরিবেশ দূষণ বেশি থাকে এটাও সমস্যা
সকালে দূষণ মুক্ত পরিবেশে হাঁটা যায়
তবে আপনি যখনি সময় পান সুবিধা মত সময়ে হেটে নিবেন
চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই সময়ে হাঁটতে
কোথায় হাঁটবেন?
চেষ্টা করুন সুন্দর, দূষণ মুক্ত পরিবেশে হাঁটতে
হাঁটার জায়গা যেন সমতল ও পরিষ্কার হয় তা লক্ষ্য রাখুন
বাড়ির বাগান, পার্কে, পরিষ্কার ফুটপাতে বা যেকোনো খোলা জায়গায় হাঁটতে পারেন
মাঝে মাঝে হাঁটার রাস্তা বা জায়গা বদল করুন
এতে একঘেয়েমি কাঁটবে
হাঁটার ক্ষেত্রে সব সময় যা যা মনে রাখতে হবে তা হলো– পুরা শরীর কে সঠিক posture এ রেখে, হাত ও পা ব্যবহার করে, মন স্থির করে, পর্যাপ্ত শক্তি দিয়ে হাঁটতে হবে
তাহলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে
হাঁটার সময় সঠিক posture কেমন হবে জানতে
সপ্তাহে কতদিন ও কতক্ষণ হাঁটবেন?
সপ্তাহের অধিকাংশ দিন, যেমন: ৪-৬ দিন, ৩০-৬০ মিনিট হাঁটুন
সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন শরীরকে বিশ্রাম দিন
শরীরকে বিশ্রাম দিলে আপনার ব্যায়াম ভালমত কাজ করবে
কারণ, বিশ্রামের ফলে মাসেল তৈরী হবে, শক্তি ফিরে আসবে ও ব্যায়াম কাজ করবে
আবার এক,দুই দিনের বেশি বিশ্রাম দিতে যাবেন না, তাহলে হাঁটার ফল পাবেন না