الجمعة، 7 يناير 2011

বিকল্প শিশু খাদ্য খাওয়ানোর প্রবণতা বাড়ছে

জন্মের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিকল্প শিশু খাদ্য খাওয়ানোর প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে।
অপুষ্টিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বিকল্প খাদ্য অর্থাৎ গুড়ো দুধ শিশুদের দিচ্ছেন মায়েরা।
সরকারের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বলছে, জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ এবং ছয় মাসের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। বিকল্প খাদ্য বা অন্য কিছু খাওয়ানো হলে তা হবে শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এমনকি শিশু অপুষ্টিতে ভুগতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. ফাতেমা পারভীন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অনেক মা-ই শিশুকে সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না। এ কারণে বাচ্চারা বুকের দুধ খেতে চায় না। মা তখন শিশুর কথা ভেবে বিকল্প খাদ্য হিসেবে গুড়ো দুধ বোতলে ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। শিশু একবার বোতলে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বুকের দুধ খাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।"

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার স¤প্রতি দেশব্যাপী কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

বেশিরভাগ অভিভাবকই অসচেতনতার কারণে শিশুকে বিকল্প খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানীর বাজারজাত করা গুড়ো দুধ ও অন্য খাদ্য খাওয়াচ্ছে।
স¤প্রতি সরেজমিনে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউণ্ডেশনের প্রধান ড. এস কে রায় বিকল্প খাদ্যকে শিশুর জন্য আত্মঘাতী উল্লেখ করে বলেন, "এর ফলে শিশু মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই স্বাভাবিক খাবার খাওয়ার চাহিদা কমে যায়। এমনকি বুকের দুধ কিংবা বাড়তি খাবারও সে খেতে চায় না। ফলে শিশু অপুষ্টিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়।"
এই বিকল্প শিশু খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ১৯৮৪ সালে প্রণয়ন করা দি ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউ (রেগুলেশন অব মার্কেটিং) অধ্যাদেশ থাকলেও তা এখন প্রায় অকার্যকর। এই অধ্যাদেশটিকে সংশোধন করে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারলে অনেকখানি সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বিকল্প শিশু খাদ্যকে 'না' বলুন, এমন প্রচারণা সরকার এবং জনগণ সবার পক্ষ থেকে শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।

শিশুর জন্য আত্মঘাতী হলেও কেন বিকল্প খাদ্য খাওয়ানো হচ্ছে অভিভাবকদের কাছে এ প্রশ্ন করলে নানা উত্তর পাওয়া যায়।
সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের একটি গ্রাম পূর্বকালিনগর। এই গ্রামের ১৮ মাস বয়সী শিশু কল্লোলের মা চন্দনা রানী জোয়াদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার বুকের দুধ কম। তাই বাচ্চাকে ছয়/সাত মাস বয়স থেকে বাজারজাত কৌটার গুড়ো দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।"
শিশুর স্বাস্থ্য ভালো হবে- এ কথা ভেবেই কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই দুধ খাওয়ালে শিশু অপুষ্টিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে- এ কথার জবাবে তিনি বলেন, "ওসব আমার জানা নেই। আশপাশের অনেকেই তো খাওয়াচ্ছে।"
কল্লোলের বাবা রবীন্দ্রনাথ জোয়াদ্দার বলেন, "ভারতের একটি কোম্পানীর তৈরি গুড়ো দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানো হচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভারতের গুড়ো দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এসব দুধ খাওয়াতে কেউ কখনো মানা করেনি।"

শুধু এই গ্রাম নয়, পাশের গ্রামেও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল গত কয়েক বছরের তুলনায় এলাকায় শিশুদের গুড়ো দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা বাড়ছে।
অন্য একটি গ্রাম দক্ষিণ কদমতলা। এই গ্রামের ১৩ মাস বয়সী শিশু ফারজানার মা শামীমা আক্তারের কাছে কৌটার দুধ খাওয়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, "টেলিভিশন খুলেই তো দেখা যায় কৌটার দুধের বিজ্ঞাপন। এই দুধ খাওয়ালে শিশুর পুষ্টি হয়। স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই এগুলো খাওয়ানো হয়।"

একই গ্রামের আট মাস বয়সী শিশু রূপার মা রওশন আরা পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চাকে কৌটার দুধ, চালের গুড়াসহ বিস্কুট, কলা ইত্যাদি খাবার খাওয়ানো হয়।"
রূপার বাবা মৎস্যজীবি রবিউল ইসলাম বলেন, "এলাকার মানুষের ধারণা, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে যে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর কথা বলা হয় তাতে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই বাচ্চাকে কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "গত কয়েক বছরের তুলনায় এই এলাকায় এখন কৌটার দুধ খাওয়ানোর একটা ঝোঁক প্রতিটি পরিবারেরই দেখা যায়।"
ড. এস কে রায় আরো বলেন, "মায়ের দুধের মতো পুষ্টিকর উপাদান টিনজাত দুধ থেকে পাওয়া যায় না। টিনজাত দুধ খেলে নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। রোগের কারণে স্বাস্থ্য ভালো হয় না এবং মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে না।"
শিশুকে বুকের দুধ না দিলে মায়েরাও নানা সমস্যায় ভোগেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "মায়ের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। কারণ, বুকের দুধ না খাওয়ালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মায়ের শরীরে চর্বি জমে যায়।"
টিনজাত দুধ খাওয়ানোর প্রবণতা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, "এখন বিক্রেতারা সরাসরি মায়ের কাছে গিয়ে দুধ বিক্রি করছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ থেকে এই দুধ বিক্রি বন্ধ করার কিংবা মায়েদের তা না কেনার জন্য বলা হচ্ছে না।"
তিনি বলেন, "মায়েদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। কৌটার গায়ে লেখা থাকতে হবে মায়ের দুধের সমকক্ষ কোনো দুধ নেই। কৌটার দুধের সব ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে।"
"এছাড়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো অবস্থাতেই শিশুকে কৌটার দুধ দেওয়া যাবে না বলে আইন করতে হবে", বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব মো. হুমায়ন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অধ্যাদেশটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা ছাড়া শুধু আইন করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না।"

ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق